সেই সময় আর এই সময় — কলকাতায় প্রথম বিদ্যুতের আলোর আগমন

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

সেই সময়ে সন্ধ্যের পরে কলকাতা তখন দেখত চাঁদের আলোয়। আর অনেক পরে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি এলো গ্যাস বাতির আলো পথে ঘাটে,অবস্থাপন্নদের ঘরে। সাধারণ গরীব মানুষের ঘরে সেসব ছিলই না।খুব জোর ছিল রেড়ির তেলের কুপি,প্রদীপের আলো।পরে এলো কেরোসিনের হ্যারিকেন,বা লম্ফ। রাস্তায় সন্ধ্যের আগে গ্যাসবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে যেত একদল মানুষ…যাদের পরিচয় ছিল “বাতিওয়ালা” নামে সামাজিক পরিচয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তো সেই রাস্তার আলোয় পড়াশোনা করেছেন,যা আমরা সবাই জানি।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছোটবেলার স্মৃতিকথায় লিখেছেন,তিনি স্বপ্ন দেখতেন যে তিনি বড়ো হয়ে বাতিওয়ালা হয়ে ঘুরে ঘুরে,পথে পথে আলো জ্বালাবেন। আজ ভাবলে মনে হয় কি আশ্চর্যজনক সমাপতন।

সেই সময়ে সন্ধ্যের পরে পথে ঘাটে সাধারণ মানুষের চলাফেরা ছিল অত্যন্ত নগন্য।

বাবুরা জুড়িগাড়িতে যাতায়াত  করতো গাড়িতে লণ্ঠন জ্বালিয়ে।

যদিও ইতিমধ্যে বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন বিদ্যুৎের ব্যবহারের অনেক উন্নতি ঘটানোর ফলে তখন ইংলণ্ডে,আমেরিকায়,ইউরোপের দেশে দেশে বিদ্যুতের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু কলকাতা তখনও ছিল অন্ধকারে।  যদিও বৃটিশ রাজত্বে কলকাতা ছিল লন্ডনের পরেই গুরুত্বপূর্ণ শহর।

তাই, অনেক চেষ্টা চরিত্র করে ১৮৯৯ সালের ১৭ এপ্রিল নবগঠিত লণ্ডনের ‘দ্য ইন্ডিয়ান ইলেক্ট্রিক কোম্পানি’, পরে ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে কলকাতার তখনকার হ্যারিসন রোড (আজকের বড়বাজার থেকে শিয়ালদা অবধি//এখনকার মহাত্মা গান্ধী রোড)-  প্রথম বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়। তার সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকাতেও বিদ্যুতের আলো আসে।

স্বামী বিবেকানন্দ তখন সবে সারা পৃথিবী জয় করে কলকাতাতে ফিরেছেন।তিনি ইতিমধ্যেই আমেরিকায়,ইংলন্ডে বিদ্যুতের আলো দেখেছেন,এবং তিনি সেখান থেকেই চিঠিতে তাঁর পরের ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্তকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য উপদেশ দেন, এবং দেশে ফিরে যেন দেশের মধ্যে ইলেকট্রিকের ব্যবহারের উন্নতি ঘটান।

তারপর সে এক ইতিহাস। সেই সময়…১৮৯৯ সালের ১৭ ই এপ্রিল থেকে আজ এই সময়ের ২০২২ সালের ১৭ ই এপ্রিল… এই দীর্ঘ ১২৪ বছর(১২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে) কলকাতাতে বিদ্যুতের আলোর আগমনের  ইতিহাসের অগ্রগতির উত্তোরন।

আজ সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে,যে, আমাদের দেশের অষ্টাদশ শতকের, ঊনবিংশ শতকের,বিংশ শতকের,বা তারো আগের কত কত মহাপুরুষেরা বিদ্যুতের আলো,তার ব্যবহার তাঁদের জীবদ্দশায় অনেকেই দেখেই যেতে পারেননি। কিম্বা,কেউ কেউ অতি অল্প সময়ের জন্য দেখেছেন।

আজ আমরা কত ভাগ্যবান যে আমরা বিদ্যুতের আলো সহ সমস্ত রকমের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও মাধ্যমের সুবিধা উপভোগ করছি। এ আমাদের পরম সৌভাগ্য।

Related posts

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

চৈত্র বৈশাখ মধুমাধবের মায়ায় মায়ায়