হাঁপানির ওষুধ এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বাংলা তথা আমাদের দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় দীর্ঘ দিনের হাঁপানি রোগী ছিলেন।  তাই তিনি নিয়মিত দুবেলা তেজপাতা,লবঙ্গ,দারুচিনি, আদা,গোল মরিচ এবং তার সঙ্গে চা-পাতা মিশিয়ে কেটলিতে জল দিয়ে সিদ্ধ করে সেই লিকার খেতেন।বিশেষ করে শীতকালে,বর্ষা কালে।

বিদ্যাসাগর মশাই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্মন্ধেও দস্তুরমত পড়াশোনা করতেন এবং নিজের ওপরে,খুব কাছের  প্রিয়জনেদের ওপরে,এমনকি ঘনিষ্ঠ চেনা পরিচিতদের ওপরে (তারা সম্মত থাকলে) সেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রয়োগ করতেন। জানা যায় যে, তিনি সেই সময়ে ব্রাহ্ম সমাজের আমন্ত্রণে অনেকবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি গিয়েছিলেন এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ অন্যান্য ব্রাহ্ম সমাজের পুরোধাদের সঙ্গে যথেষ্ট তাঁর সখ্যতাও হয়েছিল। সেই সুবাদেই বিদ্যাসাগর মশাই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রয়োগ ঘটিয়ে ছিলেন।তাতে যথেষ্ট সুফলও মিলেছিল।

যাইহোক, বিদ্যাসাগরের খাস পরিষেবার লোক শীতকালে রোজই দুবেলা আগে কথিত সেই লিকার করে দিত,এবং তিনি সেটি খেতেন।

কিন্তু একদিন একটি ঘটনা ঘটেছিল, সেটা হোল বিদ্যাসাগর মশাই সেদিন চায়ের লিকার পান করার পরই তার সেই হাঁপানির কষ্টটা বেশ অনেকটা কমে গেল। স্বাভাবিকভাবেই তিনি একটু চমৎকৃত হলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাঁর পরিচারককে সে কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে প্রায় ভয়েতে আমতাআমতা করে বলেছিল যে সে সেদিন কেটলিটা তাড়াতাড়িতে ধুতে ভুলে গেছিল।  তাই শুনে বিদ্যাসাগর মশাই তাকে সেই কেটলিটা এনে দেখাতে বললেন। ভয়েতে পড়ি কি মরি করে পরিচারক নিয়েও এলো কেটলি। বিদ্যাসাগর মশাই ভালো করে সেটি দেখলেন,এবং দেখা গেল যে কেটলির মধ্যে দুটি আরশোলা সিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। পরিচারকের তো তাই দেখে আক্কেলগুড়ুম। কিন্তু বিদ্যাসাগর মশাই একেবারে নির্বিকার।

তখন বিদ্যাসাগরের মাথায় এক অন্য ভাবনা খেলে গেল।তিনি পরে আরশোলা  প্রচন্ড তাপে সিদ্ধ করে সেই লিকার Alcohol এ দিয়ে তাকে পরিশুদ্ধ পাতন করে হাঁপানি রোগের উপশমের জন্যে তৈরি করলেন হোমিওপ্যাথি ওষুধ.. যার নাম

“Blatta Orientalies”.

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জগতে মেটিরিয়া মেডিকা বইটি হোল একটি প্রধান গ্রন্থ। সেই বইতে হাপানির ওষুধ Blatta Orientalies-এর পাশে রয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম।

এই খবর আমরা জানতাম না।

এক সময়ে বিদ্যাসাগর অভিমানে বাংলা ছেড়ে যখন চলে গিয়েছিলেন বিহারের কারমাটারে আদিবাসীদের সাথে বসবাস করার জন্যে(জীবনের শেষ ১৫ বছর সেখানেই ছিলেন),তখন সেখানে তিনি এই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও  করতেন নিজের জন্যে,এবং স্থানীয় আদিবাসী মানুষদের জন্য। ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে বিদ্যাসাগরের সারা জীবনের নানা কাহিনীর কথা। তার মধ্যে এই ইতিহাস হোল এক বিস্ময়কর।

Related posts

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী