প্রথম পাতা বিনোদন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলার সংস্কৃতিজগতে সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতি হল

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলার সংস্কৃতিজগতে সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতি হল

906 views
A+A-
Reset

ওয়েবডেস্ক : কোনো বিশিষ্ট জন প্রয়াত হলেই আমরা তাঁর প্রতি শোক জানিয়ে অনেক সময়েই বলি তাঁর মৃত্যুতে ‘অপূরণীয় ক্ষতি হল’ কিংবা ‘বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হল’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কারও কারও ক্ষেত্রে যে এ কথা সত্যি নয়, তা নয়। কিন্তু বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই এটা কথার লব্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয় হয়তো, কিন্তু অচিরেই সেই শূন্যতা ভরাট হয়ে যায়। কিন্তু এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা চলে গেলে সত্যিই মনে হয় এই শূন্যতা ভরাট হবে না। তেমনই এক জন হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

বাংলার অভিনয়জগতে ইন্দ্রপতন হল নভেম্বরের মাঝামাঝি। তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা চলচ্চিত্রে, বাংলা নাটকে অভিনয় করতেন বলে তাঁকে শুধু বাংলা অভিনয়জগতের কিংবদন্তি শিল্পীর অভিধা দিলে তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হয় না। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী। তাই তাঁর মৃত্যুতে যে ভাবে আলোড়িত হল মিডিয়াজগত, তা বিস্মিত করে। তাঁর মৃত্যুসংবাদ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ভাষার কাগজে প্রথম পাতায় স্থান পেল।

কিন্তু সৌমিত্রকে কি শুধু অভিনেতার অভিধায় বেঁধে রাখা যায়? তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা, বাচিকশিল্পী, কবি, লেখক এবং অনুবাদক। তিনি নাটক লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। আর অভিনয় বলতে শুধু কি চলচ্চিত্র? সিনেমার পর্দা ছাড়াও তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন যাত্রা-নাটকের মঞ্চও। টিভির ধারাবাহিক এবং টেলিফিল্মেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন।         

চলচ্চিত্রজগতে কী ভাবে আবির্ভাব হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের? এ বিষয়ে আশ্রয় নেওয়া যাক সত্যজিৎ রায়ের।

সত্যজিৎবাবু তাঁর ‘অপুর পাঁচালি’তে লিখেছেন, “…এবারে ‘অপুর সংসার’-এর – অপুকে নিয়ে তৃতীয় ছবির ওই নামই দিয়েছিলাম – বিভিন্ন চরিত্রে ফের তাঁদের নামাব বলে ঠিক করি, যাঁরা পেশাদার নন। নতুন মুখ চাইছিলাম বিশেষ করে অপু, তার স্ত্রী অপর্ণা, তার ছেলে কাজল এবং অপুর বন্ধু পুলুর জন্য।… ‘অপরাজিত’ ছবি তুলবার সময় কিশোর অপুর চরিত্রে নামাবার জন্য যখন ওই বয়সের ছেলের খোঁজ চলছিল, তখন প্রোডাকশনের ব্যাপারে আমার সহকারী নিতাই দত্ত এক তরুণকে আমার কাছে নিয়ে আসে। এর নাম শুনলাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। চেহারার দিক দিয়ে সৌমিত্র ঠিকই ছিল, কিন্তু চরিত্রটির তুলনায় বয়স একটু বেশি, কুড়ি বছর। সৌমিত্র সদ্য তখন কলেজ থেকে বেরিয়েছে। তাকে সেদিন ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। এবারে তাকে আবার ডেকে পাঠিয়ে প্রধান ভুমিকাটা দিতে চাই। তখন সে রেডিয়োতে ঘোষকের কাজ করে, অভিনয়ে খুব আগ্রহ। শিশির ভাদুড়ি মশাইয়ের একটা নাটকে শুনলাম ছোটখাটো একটা ভূমিকায় ইতিমধ্যে অভিনয়ও করেছে।”

‘অপুর সংসার’ দিয়ে জয়যাত্রা শুরু হল সৌমিত্রর। সত্যজিৎ নিজেই লিখেছেন, “বাংলা ছবির নায়ক হিসাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আকর্ষণ এর পরে খুব বেড়ে যায়।” সত্যজিৎ রায়ের ১৪টি চলচ্চিত্র-সহ ২১০টিরও ছবিতে অভিনয় করেছেন।

নাটক, কবিতা ও প্রবন্ধ-সহ এক ডজন গ্রন্থের লেখক সৌমিত্র। সারা জীবনে অগণিত সম্মান ও পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। চলচ্চিত্রের একাধিক জাতীয় পুরস্কার এবং ফ্রান্স দেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পী-পুরস্কার ছাড়াও তিনি পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, সাম্মানিক ডি লিট এবং ফ্রান্স সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান লিজিয়ঁ দ্য অনার।

তাঁর মৃত্যুতে বাংলার সংস্কৃতিজগতে সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতি হল।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.