খাস কলকাতায় অটোর ভিতরে উদ্ধার হল ১৯টি তাজা বোমা। পাচারের আগেই উদ্ধার করা হল বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, গুলি ও বিস্ফোরক। হরিদেবপুরে এলাকার ৪১ পল্লি ক্লাবের সামনে একটি পরিত্যক্ত অটোর ভিতরে রাখা ছিল বোমাগুলি। উদ্ধার একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বুলেট। বসত দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটো থেকে এসব উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কলকাতার হরিদেবপুর থানা এলাকায়।
জানা গিয়েছে, একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভিতরে রাখা ছিল বোমাগুলি। সেখানেই বন্দুক এবং কার্তুজের সন্ধান পাওয়া যায়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্লেখ্য, পরিত্যক্ত ওই অটোটি হরিদেবপুর রুটের নয়। তার পিছনে বিজয়গড় থেকে চক্রবেড়িয়া লেখা ছিল বলে খবর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার ৪১ পল্লি ক্লাবের সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরেই একটি অটো দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু, অটোর ধারে কাছে কেউ ছিল না। এই ঘটনা দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরাই থানায় খবর দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলে পৌঁছেই দাঁড়িয়ে থাকা ওই অটোয় তল্লাশি শুরু করা হয়। অটোর ভিতর একটি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগের ভিতর থেকেই ১৯ টি বোমা, ২ রাউন্ড কার্তুজ এবং একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এই কাণ্ড দেখেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় প্রত্যক্ষদর্শীদের। তাঁদের বক্তব্য, ওই বোমা যদি কোনওভাবে ফেটে যেত, তাহলে কী হত! বসত এলাকায় কে, কখন এসব রেখে গেল, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অন্য কোথাও অস্ত্র এবং গোলা-বারুদ নিয়ে যাওয়ার জন্যই সেগুলি অটোয় রাখা হয়েছিল। কিন্তু, স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। অটোমালিকের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। পাশাপাশি ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান বোমাগুলি হয়তো দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৈরি হয়েছে এবং সেখান থেকেই কলকাতায় আনা হয়েছে। লুকানোর স্থান হিসেবে পরিত্যক্ত অটোকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের অনুমান, এই ঘটনার নেপথ্যে কোনও বড় চক্র থাকতে পারে। ভিনরাজ্যের যোগ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। আসলে অটো নেহাতই একটি সাদামাটা যান। তাই ছোট্ট এই বাহনটিও যে অস্ত্র পাচারের কাজে ব্যবহার করা হতে পারে, এমন সন্দেহ কারও হবে না। আর সেই কারণেই দুষ্কৃতীরা অটোয় করে অস্ত্র পাচারের ছক কষেছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ওই অটোটি ঢেকে রাখা হয়েছিল। সেই কারণেই তাঁদের আরও বেশি করে সন্দেহ হয়। পুলিশ অটোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর বের করে তদন্ত শুরু করেছে। অটোর মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। উদ্ধার হওয়া সমস্ত অস্ত্র-শস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে তারা। সেগুলি কোথা থেকে আনা হয়েছে এবং কোথায় পাচার করা হচ্ছিল, তা জানারও চেষ্টা করছে পুলিশ। শহরে বড় কোনও নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, এই সূত্রে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দোলের দিনও শহরে গুলি চলার ঘটনা ঘটেছিল। তার পরদিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। তারপর থেকে শহরের একাধিক জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বোমাবাজিও রয়েছে। শুরু থেকেই বিষয়টি কলকাতা পুলিশের নজরে রয়েছে। নানা জায়গায় খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেই হরিদেবপুরে পরিত্যক্ত অটোর ভিতরে বোমা উদ্ধারের ঘটনাটি ঘটে।, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যে যেখানে যত অস্ত্রের ভাণ্ডার আছে, সব উদ্ধার করতে হবে। তারপর থেকেই পুলিশ মহলে এ নিয়ে তৎপরতা বেড়েছে । বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তাতে সাফল্যও মিলছে। কিন্তু, তারপরও ৪১ পল্লি ক্লাবের সামনের যে রাস্তায় কীভাবে এই অটো এল? কেনই বা অটোর ভিতরে এতগুলি বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র এবং বুলেট মজুত করে রাখা ছিল? এর নেপথ্যে কোনও বড়সড় নাশকতার ছক ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।