ডেস্ক: ইয়াসের দাপটে রাজ্যের অন্ত ১৩৪ টি বাঁধ ভেঙেছে। এত বাঁধ কেন ভাঙল তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী পক্ষ। আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বসে মমতা জানিয়ে দেন, কেন এতগুলো বাঁধ ভাঙল তা নিয়ে তদন্ত হবে। তদন্ত প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করারও নির্দেশ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এখানেই প্রশ্ন কী করছিল সেচদফতর? তবে কী বাঁধের নজরদারিতে গুরুত্ব দেয়নি সেচ দফতর? রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঁধের ফাটলের খবর পেয়েই কার্যত সেচ দফতরের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। মমতার তুমুল ভর্ৎসনার মুখে পড়েন সেচ দফতরের সচিব। মমতা বলেন, ‘সেচ দফতর থেকে দিঘায় যেটা করেছিলে, তার পুরোটাই ভাঙল কীভাবে? এত কংক্রিট করেও (ভাঙল কীভাবে)? দু’বছরের মতো হয়েছে। জলের স্রোত ছিল, সবটা ঠিক আছে। সবটা কীভাবে ভেঙে গেল।’ সেচ দফতরের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলে মমতা পালটা বলেন, ‘করতে করতে তোমরা সময় নিচ্ছ। কবে শেষ করার কথা! কত বছর হল কাজটা করতে? তিনটি ব্রিজ করার কথা ছিল কতদিনে? আর তোমরা এটাকে কতদিন ঝুলিয়ে রেখেছ? তোমরা নজরদারি চালাও? কেন এতদিন সময় লাগে? না! আমি নিজে দেখেছি। আমার ১০ বার ঘোরা হয়ে গেল। কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। প্রতিবারই শুধু হচ্ছে, হচ্ছে, হচ্ছে, হচ্ছে। ’
মমতা এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আজকেও বিদ্যাধরী নদীর একটা বাঁধ ভেঙেছে। দীঘায় একটা পাড় বাঁধানোর কাজ চলছে এত বছর ধরে। কেন এত দিন সময় লাগছে। টাকা কি কম নিচ্ছে ? টাকা তো কম নিচ্ছে না। কেন এতদিন সময় লাগছে। এর একটা তদন্ত করা হবে। টাকা তো সব জলেই চলে যাচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’ ইরিগেশনের কাজটা আরও একটু গুরুত্ব দিয়ে করার জন্য বলব। ইরিগেশনের অনেকগুলো বাঁধ ভেঙেছে। আমফান হয়ে যাওয়ার পরে অনেকগুলি বাঁধ সারিয়েছিলাম। জানি কয়েকটি জায়গায় গতি আটকানো যায়না। প্রকৃতি আমাদের হাতে নেই। কিন্তু যে কাজগুলি আমরা করি, প্রতিবছর যদি একটা করে আমফান হয়,একটি করে বুলবুল হয়, একটা করে আয়লা হয় তবে কাজ করছি সবটাই ভেসে যাচ্ছে। সবটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হোয়াট ইজ দ্য সলিউশন? তোমাদের এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ম্যানগ্রোভ অনেকটা আটকায়।
আরও পড়ুন: আমফানের পুনরাবৃত্তি আর চান না, ‘দুয়ারে ত্রাণ’ মমতার! টাকা যাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কংক্রিটের ব্রিজ তৈরি করলে আর দুদিন বাদে আবার নষ্ট হয়ে গেল। সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এই টাকা আসবে কোথা থেকে। কেন্দ্র তো দেয় না। নদীমাতৃক বাংলা। কখনও এক্সপার্টদের মতামত নিয়েছ? মাটির বাঁধ করব কেন। প্রতিবছর ভেসে যাবে। মাটির বাঁধে গাছ ব্যবহার কর যেটাতে শক্ত হয়। একটা প্ল্যানিং কর। গাছগুলো পোঁতার সময় বনদফতরের সঙ্গে সমণ্বয় থাকবে। একটা টাস্ক ফোর্স করে দিলাম।মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে বনদফতর, ডিজাসটার, ইরিগেশন, অর্থ, হোম, পরিবেশ দফতর ওই টাস্ক ফোর্সে থাকবে।’
একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, যে যে রাস্তা ভেঙেছে সেগুলোকে ‘পথশ্রী’ প্রকল্পের মধ্যে নিয়ে নিতে হবে। যারা রাস্তা তৈরি করবে তারা যেন তিন বছরের জন্য রাস্তার সব দায়িত্ব নেয়। না হলে সেই ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এটা তো সরকারের আইনেই আছে।