লোকসভার পর ধাক্কা উপনির্বাচনে! পশ্চিমবঙ্গে কি ফের একবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বিজেপি? লিখলেন ইমন কল্যাণ সেন
‘হার’ অথবা ‘হারানো’র ধারা অব্যাহত বিজেপি-র। প্রথমে ধাক্কাটা লেগেছিল লোকসভা ভোটে। আর তার কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলার চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কার্যত শূন্য হয়ে গেল বিজেপি। এমনিতে সমস্ত কৌশল কাজে লাগিয়েও লোকসভায় আশানুরূপ ফল না হওয়ায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মনোবল তলানিতে ঠেকেছিল। নেতৃত্বও কার্যত দিশেহারা। এখন ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জেতা তিন আসন হারানো রাজ্য বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল!
২০২১ বিধানসভা ভোটে ২০০ পারের স্লোগান দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। তবে ৭৭-এই থমকে গিয়েছিল বিজেপির রথ। তিন বছরের মাথায় সেই সংখ্যা কমতে কমতে ঠেকেছিল ৭৪-এ। আর উপনির্বাচনের ফল বেরোতে সেটাই দাঁড়াল ৭১-এ। তবে দলবদলের হিসাব ধরলে বিজেপির বর্তমান বিধায়ক সংখ্যা আরও কিছুটা কম। এ রাজ্যে বিজেপির অতীত পরিসংখ্যানের নিরিখে হয়তো এই অঙ্ককে ততটা ফিকে লাগার নয়। কিন্তু শেষ দুই ভোট, লোকসভা এবং বিধানসভার ফলাফল দেখলে বোঝাই যাচ্ছে, বছর পাঁচেক আগে এ রাজ্যের ভোটারদের মনে বিজেপি (অথবা মোদী)-কে নিয়ে আগ্রহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই এখন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এই দুই ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট একটা বড় অংশের ভোটারদের মধ্যে বিজেপি বিরোধী মনোভাব দেখা যাচ্ছে।
রাজ্য বিজেপির একটা অংশ অবশ্য এই ফলাফলের নেপথ্যে শাসক দল তৃণমূলের গা-জোয়ারি করে ভোট করানোর তত্ত্ব আওড়াচ্ছেন। তাদের মতে, ভোট-রাজনীতিতে তৃণমূলের সাংগঠনিক ক্ষমতার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো সংগঠন নেই বিজেপির। কিন্তু ওই সব তাত্ত্বিক নেতাদের কে প্রশ্ন করবে, ২০১৯-এ পশ্চিমবঙ্গে কী এমন সংগঠন ছিল তাঁদের? দুই থেকে একলপ্তে ১৯টা আসন পাওয়া মুখের কথা নয়। মোদীর মুখ আর তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে মজে ভোটাররা পদ্মে বোতাম টিপেছিলেন বলেই তো বাংলায় বিজেপির সেই ঐতিহাসিক সাফল্য! তৃণমূলের সাংগঠনিক ক্ষমতার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার প্রশ্ন আসেনি সেবার। এখন ভোটে লড়ার মতো সংগঠন নিয়ে ব্যাপক চেঁচামেচি করে কী লাভ?
লোকসভা ভোটে বিজেপির বিপর্যয় নিয়ে অনেক কাটাছেঁড়া হয়েছে। কারণ অনুসন্ধানে বিজেপি নেতৃত্বের থেকেও অনেক বেশি ঘাম ঝরিয়েছেন সংবাদ মাধ্যম এবং বিশ্লেষকরা। কিন্তু মাঝে যে সময়টা কেটে গেল, তাতে বিজেপি নেতৃত্ব ঠিক কী করলেন, কোথায় রইলেন, কিছুই জানা গেল না। ভাগ্যিস চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনটা ছিল। সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতে পতাকা ধরতে দেখা গেল কয়েকজনকে। নইলে সারা রাজ্যের আর কোথাও সেভাবে আর পথে দেখা যাচ্ছে না বিজেপি-কে। মাঝে চোপড়া, সোনারপুর বা সাম্প্রতিক কামারহাটি কাণ্ড নিয়ে সংবাদ মাধ্যম উঠেপড়ে লাগতেই যৎসামান্য নড়চড়ে বসতে দেখা গেল বিজেপি নেতৃত্বকে। কিন্তু উপনির্বাচনের ফলাফল বেরোতেই আবার যে-কে-সেই।
উপনির্বাচনের ফলাফলে যে যথেষ্ট চিন্তার বিষয়, সেকথা মানছেন বিজেপি নেতৃত্বও। কিন্তু এই চিন্তা কাটিয়ে উঠতে ঠিক কী পরিকল্পনা-পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তারও কোনো স্পষ্ট দিশা নেই। সামনে ২০২৬। আগামী বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে নামার জন্য হাতে সময় আছে অনেকটাই। তবে সবার আগে দলের অন্দরমহলে ঝাড়পোঁছ করতেই অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে বঙ্গ-বিজেপির। হারতে হারতে হতাশাগ্রস্ত কর্মী-সমর্থকদের নতুন করে উজ্জীবিত করা তার পরের বিষয়। সবশেষে ভোটবাক্সে লোক টানা। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া যতটা না সময়সাপেক্ষ বিষয়, তার চেয়েও জটিল এবং কঠিন। বিশেষ করে সারা দেশে যে ভাবে বিজেপি (মোদী)-বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে, সেই আবহাওয়ায় বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ ফের এক বার বিজেপিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে কি না, সেটা সময়ই বলবে!