প্রথম পাতা প্রবন্ধ “আজ আশ্বিনের শারদপ্রাতে…”

“আজ আশ্বিনের শারদপ্রাতে…”

111 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

গণেশ চতুর্থীর পর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার পরের দিন থেকে শুরু হয় কৃষ্ণপক্ষ, আর তার অনুসরণে পিতৃপক্ষের আবাহন। ঠিক এক পক্ষকাল পরেই আসে মহালয়া।

বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসে পূর্বজদের স্মরণ করা এবং তাদের স্মৃতি তর্পণ করার নিয়মনীতি, রেওয়াজ রয়েছে। যেমন মুসলমানদের “শব-ই-বরাত”…, খ্রিস্টানদের ইস্টার স্যাটার ডে”, ইত্যাদি। ঠিক তেমনই হিন্দুশাস্ত্র মতে, এই আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের সময়ে মরণোত্তর আত্মারা পিতৃলোক ছেড়ে এসে যে যার উত্তরসূরীয় আত্মীয়দের সঙ্গে বসবাস করেন। স্বর্গলোক থেকে তাঁরা মর্তলোকে নেমে আসেন। আর এই সময়কাল একমাস। তাই এই একমাসের শেষে মহালয়ার দিনে তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এই শ্রদ্ধা জ্ঞাপনই “তর্পণ” নামে খ্যাত। এ দিন নদীতে, বা কোনো জলাশয়ে সারা ভারতে মানুষ তাদের পূর্ব-পুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন। তাঁদের ঋণ স্বীকার করি আমরা, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি আমরা। তাই মহালয়া আমাদের কাছে একটি ঐতিহ্য, একটি পরম্পরা।

আবার এই মহালয়ার দিনই দেবী মা দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তিতে চক্ষুদান করা হয়। পৌরাণিক মতে এইদিনই দেবী দশভূজা অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য এবং শুভ শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এই ধরাধামে আবির্ভূতা হন।

তাই মহালয়ার আক্ষরিক অর্থ হল “গৃহেতে প্রত্যাগমন” মানে, ঘরে ফেরা, বা আসা। তাই মহালয়ার পরেরদিন থেকেই মা দশভূজা সপরিবারে সন্তান-সহ আসেন আমাদের ঘরে, আমাদের সুখ দুঃখের জীবনে ক’টা দিনের জন্য। তাই সারা ভারতবর্ষে পালিত হয় “নবরাত্রি” উৎসব সেদিন থেকে। আর আমাদের বাংলায় শুরু হয় শারদীয়া উৎসব।

শরতের নীলাকাশে তুলতুলে নরম তুলোর মতো, সাদা গাভীর মতো, সাদা হাঁসের পালকের পালকির মতো মেঘেদের শুরু হয় আনাগোনা। রাস্তার দু’ধারে হাওয়ায় হাওয়ায় দোদুলদোলে দুলতে থাকে কাশফুলের মাথা। বাতাসের সারা শরীরে মাখামাখি হয়ে থাকে আলতো করে শিউলির সুবাস। প্রাণে মনে ধ্বণিত হয় দেবী মায়ের আগমনীর আগমন বার্তা। শুরু হয় মহালয়ার আয়োজন। আর আমাদের এই জীবনের উঠোন জুড়ে এক অনির্বচনীয় আনন্দের রোমাঞ্চকর শিরশিরানি ভাব মহালয়ার দিনের সেই ভোরের বেলা থেকেই জেগে ওঠে।

তাই মহালয়া মানে ভোর চারটের সময়ে রেডিওতে “মহিষাসুরমর্দিনী”-র প্রভাতী অনুষ্ঠান। বাণীকুমার (বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য)-এর লেখা,পঙ্কজকুমার মল্লিকের সুর-সঙ্গীতে সাজানো, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই উদাত্ত কণ্ঠের স্তোত্র পাঠ…”আজ আশ্বিনের শারদপ্রাতে জেগে উঠেছে….ধরণীর নীলাকাশে…” আর সুর মুর্ছনায়… “জাগো তুমি জাগো,…জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী…জাগো মা…” শুনতে শুনতে বাঙালির কেটে যায় শৈশব, যৌবন, মাঝ-বয়স,প্রৌঢ়ত্বের দিনগুলি। আর এই অনুষ্ঠানের শুরু হয়েছিল সেই ৯০ বছর আগে ১৯৩২ সালে। যার সাক্ষী শ্রোতা হিসাবে সেদিন ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, কাজি নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র, মা সারদা, সুভাসচন্দ্র, শ্রী অরবিন্দ, প্রমুখ প্রমুখ মহাতারকাবৃন্দ।

সে দিনের সেই আনন্দ আজও ৯০ বছর পরেও বাঙালি জীবনের অঙ্গে বয়ে নিয়ে আসে সে একই অনুভব… মা আসছেন আমাদের ঘরে আমাদের কন্যারূপে, আমাদের সুখ দুঃখের ঘরকন্নায়…।

এখানেই এই মহালয়া দিনের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যমণ্ডিত পরম্পরা।

সকলে সপরিবারে ভালো থাকবেন। আগামী শারদীয়ার শারদ শুভেচ্ছা রেখে গেলাম।

আরও পড়ুন: আসন্ন শারদীয়া উৎসবের অগ্রিম শুভ কামনা…

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.