পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
মানুষের সভ্যতায় প্রজন্মের পর প্রজন্মে যে সম্পর্কটি অতি সম্মানের,শ্রদ্ধার এবং পরম্পরাগতভাবে আজও প্রবহমান, তা হোল, “গুরু-শিষ্য”- সম্পর্ক। বৃহত্তর অর্থ হিসাবে গুরু হলেন তিনিই যিনি আমাদের জীবনে,মননে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোর পথ দেখান। কারন,”গু”-শব্দের অর্থ হল অজ্ঞতার অন্ধকার, আর ” রু”- শব্দের অর্থ হল অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোর সাথে বিকশের এবং প্রকাশের পরিচয়। আর এই কাজটি যিনি আমাদের জীবনে করান তিনিই আমাদের গুরু। তিনি রক্তের সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের মা,বাবা,পরিজন,এবং যেকোনো ব্যক্তিই হতে পারেন,হতে পারেন আমাদের শিক্ষা জীবনের মাস্টার মশাই,দিদিমনিরা,প্রমুখগণ। শ্রীরামকৃষ্ণ-র বাণী থেকে পাই” আমাদের জীবনে গুরুর স্থানে বিরাজ করছেন প্রকৃতি,পরিবেশ,মা-বাবা, প্রবীণ ব্যক্তি, শিক্ষাগুরু, দীক্ষাগুরু,কর্মগুরু, প্রমুখ ৩২ জন।
তথাগত গৌতম বুদ্ধের বাণী এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক…, আর সেটা হোল…সেই অমোঘ বাণী… “তমসো মা জ্যোতির্গময়, অসদো মা সদগময়, মৃত্যোর্ম্মা অমৃতম গময়।
আমাদের ভারতবর্ষে এই গুরু সম্পর্ককে শ্রদ্ধা জানাতেই প্রতি বছর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এই গুরুপূর্ণিমা-র দিনটা।
এই গুরুপূর্ণিমা তিথি শুধু হিন্দু ধর্মের মানুষই পালন করেন না,এই তিথি পালিত হয় বৌদ্ধদের সমাজেও ,শিখদের সমাজেও,জৈনদের সমাজেও।
কথিত আছে এই দিন নাকি মহাভারত,গীতা, ১৮টি পুরাণের প্রণেতা ঋষি ব্যাসদেবের জন্মদিন। মা ছিলেন মৎস্যগন্ধা সত্যবতী আর বাবা ছিলেন পরাশর মুণি।
আবার এই দিনেই নাকি দেবাদিদেব মহাদেব যিনি আদিগুরু,তিনি নাকি তাঁর প্রথম সাতজন শিষ্য যাঁরা সপ্তর্ষিমন্ডলের ঋষি..তাঁদের দীক্ষিত করেন। এই সাতজন হলেন, অত্রি,অঙ্গীরা,বশিষ্ঠ, পুলস্থ্য,পুলহ,ক্রতু,মারিচী।
আবার,এই তিথিতেই শাক্যমুনি শাক্যসিংহ তথাগত গৌতম বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভ করার পরে সারনাথে প্রথম উপদেশ দিয়েছিলেন। এটাই বৌদ্ধদের বিশ্বাস।
আবার শিখ ধর্মশিক্ষাকে প্রচারের জন্য এই গুরুপূর্ণিমার দিনেই সন্ত গুরু নানক তাঁর বন্ধু,প্রথম শিষ্য মার্দানা-কে নিয়ে পরিব্রাজক জীবন যাপন শুরু করেছিলেন।