পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
আজ থেকে প্রায় আড়াই/তিন হাজার বছর আগে মৌর্য যুগে চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালের সময়ের পূর্ব সময়ে আনুমানিক ৩২২ খ্রীস্টপূর্বতে এই রাস্তা বা সড়কের নাম পাওয়া যায়। চন্দ্রগুপ্ত,পুরু,চানক্য,তক্ষশিলায়,অশোক, প্রমুখদের বিভিন্ন ইতিহাসে, বৌদ্ধ যুগের বিভিন্ন লেখায়, চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ,গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডার, গ্রীক সেনাপতি সেলুকাস, গ্রীক পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস, পোর্তুগিজ পরিব্রাজক ভাস্কো দা গামা, পরিব্রাজক ইবন বতুতা, মুঘল ঐতিহাসিক আবুল ফজল, প্রমুখদের বিভিন্ন লেখায় এই সড়কের উল্লেখ পাওয়া যায়।
শিখগুরু সন্ত নানক, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সারা ভারত পরিভ্রমের পথপরিক্রমনেও এই রাস্তায় তাঁদের পায়ের ধুলো পড়েছিল। শ্রীমা সারদার পায়ের ধুলো পড়েছিল এই পথের বুকে।স্বামী বিবেকানন্দের সন্ন্যাস জীবনের কালে ভারত পরিভ্রমণের সময়েও তাঁর চলার পথ ছিল এই সড়ক। বহু ইতিহাসের সাক্ষী-ধণ্য এই সড়ক পথটি। এই সড়কটি অখন্ড ভারতবর্ষের বুক থেকে প্রায় সমস্ত এশিয়ার ভূখণ্ড জুড়েই রয়েছে। প্রাচীনকালে এই রাস্তার নাম ছিল উত্তরাপথ।
এটি এশিয়া তথা সারা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম এবং দীর্ঘতম সড়কপথ। এই পথটি আজকে বাংলাদেশের ঢাকা নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে শুরু করে যশোর, ফরিদপুর, রাজসাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ প্রমুখ স্থান হয়ে, এখনকার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, হয়ে এদেশের অন্যান্য প্রদেশ যথাক্রমে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যার মধ্য দিয়ে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হয়ে, বর্তমানের পাকিস্তানের লাহোর, গুজরানওয়ালা, রাওয়ালপিন্ডি, মুলতান, বোরহানপুর, প্রমুখ জায়গা হয়ে, এখনকার ইয়াঙ্গন( বর্মার রেঙ্গুন) হয়ে,মায়ানমার দিয়ে, আফগানিস্তানের পেশোয়ার, জালালাবাদ, কাবুল অবধি বিস্তৃত।
এই সড়কের দৈর্ঘ্যের পরিমাপ প্রায় ৩৭১০ কিঃমিঃ( মানে ২৩০৫ মাইল)। সুলতানি যুগে এই রাস্তার নাম ছিল শাহ রাহে আজম। সম্রাট শের শাহ ১৫৪১ সাল- ১৫৪৫ সালে এই রাস্তাটির সংস্কার করেন এবং তখন এর নাম ছিল শের শাহ শুরি বা বাদশাহী সড়ক তথা সড়ক ই আজম।
পরে ১৮৩৩ সাল থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে বৃটিশ যুগে এই রাস্তার আরও সংস্করণ করা হয় এবং নামকরণ করা হয়– গ্র্যাণ্ড ট্র্যাঙ্ক রোড…যা আমাদের কাছে জি.টি. রোড নামে পরিচিত।
ভাবতেই অবাক লাগে, যে, একটি সড়কের সাথে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ইতিহাস জড়িত হয়ে আছে। যা সারা দুনিয়ায় আর কোত্থাও পাওয়া যায়না। এখানেই এই জি.টি. রোডের বিশেষত্ব।