পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাতে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো অনুষ্ঠিত হয় এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার ঘরে ঘরে। শুধু তাই নয়,এই পুজো বাংলাদেশ,পশ্চিমবঙ্গ,ছাড়াও আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, মেঘালয়, সিকিম, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মায়নমার, ইত্যাদি অঞ্চলেও অতি সমারোহে অনুষ্ঠিত হয়।
কোজাগরী শব্দটি এসেছে “কো জাগতি..” অর্থাৎ কে জেগে আছো!? মানে আশ্বিনের এই রাতে কে জেগে আছো। এইজন্যই বোধহয় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজা হয় রাতের দিকে।
এই পুজো সাধারণত বাড়ির মহিলারাই করে থাকেন। ধন- সম্পদ- অর্থ ইত্যাদির অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা লক্ষীর সান্ধ্যকালীন আরাধনাতে থাকে নানা রকমের পুজা উপচার।ঘরে ঘরে ফল,মিস্টি,খিচুড়ি,পায়েস,
তালফোঁপড়, নারকেল নাড়ু,বীরখণ্ডি,কদমা,চিড়ে,মুড়কি,ইত্যাদি ইত্যাদি থাকে নৈবেদ্যর থালাতে। ধুপ ধুনোয় মাতোয়ারা হয়ে ওঠে বাংলা ও বাঙালির ঘর-দোর,উঠোন।যার যেমন ঘর,সেখানে সাজানো হয় আলপনা দিয়ে। সন্ধ্যের পর থেকে ঘরে ঘরে শোনা যায় লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ার সুর,আর শঙ্খধ্বনি,উলুধ্বণির আনন্দরোল।
প্রতিটি গৃহস্থবাড়িতে সেই বাড়ির মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাদের কন্ঠে সুর ওঠে… “এসো মা লক্ষ্মী, বোস ঘরে,…/আমার এ ঘরে থাকো আলো করে…”। সে এক মহোৎসব। লাল পাড় শাড়িতে সেজে ওঠেন বঙ্গনারী,বঙ্গপ্রমীলার দল…।
প্রতিটি ঘরের পাশাপাশি প্রতিটি বারোয়ারী মণ্ডপে এইদিন দেবী কমলাসনা মা লক্ষ্মীর আরাধনা হয়। উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনির সাথে বেজে ওঠে সুর…” শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি,সুগন্ধি ধুপ জ্বেলে আসন পেতেছি….এসো মা লক্ষ্মী… “।
শারদীয়া দুর্গাপূজার পরে এই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজা সত্যিই এক মহোৎসবের রূপ নেয়।আমাদের দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই এই পুজো হয়।এছাড়া দেশের বাইরেতেও সারা বিশ্বে যেখানে যত বাঙালী আছেন,সব জায়গাতেই এই পুজো হয়।তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেতেও লক্ষ্মী পুজা সমাদরে অনুষ্ঠিত হয়।
আজ সেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজার দিন। মা লক্ষ্মীর কাছে প্রার্থনা রেখে যাই,তিনি যেন সকলের সংসারে শ্রী,সম্মৃদ্ধি,সচ্ছলতা দান করেন।সকলকে যেন ভালো রাখেন।সকলের ঘরে যেন বিরাজ করেন।
সবাই ভালো থাকবেন।
আরও পড়ুন: সকালে আকাশ রোদ ঝলমলে, লক্ষ্মীপুজোয় বেলা গড়ালে কি হাওয়া বদল?