প্রথম পাতা প্রবন্ধ ‘কাউন্ট ইয়োর ব্লেসিংস’

‘কাউন্ট ইয়োর ব্লেসিংস’

108 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

আমাদের জীবনে “কৃতজ্ঞতা”, “সফলতা” শব্দগুলো খুবই দামী শব্দ। সকলে এর মানে উপলব্ধি করতে পারেন না। অধিকাংশ মানুষই তাদের জীবনে এই সফলতায় ভেসে গিয়ে আত্মশ্লাঘায় কৃতজ্ঞতা শব্দটাকে কোনো সম্মানই দেয় না।

যদিও,অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে।আর আজ সেই ব্যতিক্রমী সত্য কাহিনীই এখানে উপস্থাপনা করবো।

সদ্য সমাপ্ত কমনওয়েলথ গেমস/২০২২ এ আমাদের দেশের অন্যতম স্বর্ণ পদক জয়ী মীরাবাই চানু-র কথা আমরা সকলেই জানি।  মনিপুরের মেয়ে মীরা চানু ২০১৪ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরে ভারোত্তোলন ইভেন্টে রৌপ্য পদক জয় করে দেশে ফিরে আসার পরে একটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই।

মীরার জন্ম ১৯৯৪ সালে।মণিপুর রাজ্যের ইম্ফল থেকে অনেক দূরে নংপক কাকচিং নামক একটি গ্রামে মীরাদের বাড়ি। খুবই গরীব দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের মেয়ে হলো এই মীরা চানু।

মীরার বাড়ি থেকে ইম্ফল স্পোর্টস একাডেমি প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। অনেকটা দূরের রাস্তা।তার ওপরে পাহাড়ি পথ। এহেন একটি জায়গার একটি অতি গরিব পরিবারের মেয়ে মীরা স্বপ্ন দেখতেন ওয়েট্ লিফটার্ হবেন। কিন্তু,কিভাবে ৩০ কিলোমিটার দূরে একাডেমিতে তিনি যাবেন!!

সমস্যাকে জয় করাই হোল জীবনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী।

মীরাদের বাড়ির গ্রামের পাশ দিয়েই গেছে পাকা সড়ক।সারাদিনে বালি,পাথর,সিমেন্ট, অন্যান্য জিনিষ নিয়ে এইপথে ট্রাক যাতায়াত করত। ব্যাপারটা জানাজানি হওয়ার পরে ছোট্ট মীরাকে সেই ট্রাক ড্রাইভাররা ট্রাকে করে বাড়ির সামনে থেকে তুলে ইম্ফলের একাডেমিতে  নামিয়ে দিত,আবার ফেরার সময়ে অন্য কোনো এক ট্রাক ড্রাইভার মীরাকে নিয়ে এসে বাড়ির সামনে পৌঁছে দিত। এইভাবেই চলেছিল আমাদের দেশের অন্যতম স্বর্ণ জয়ী,রৌপ্য জয়ী অলিম্পিয়ান মীরাবাই চানুর ওয়েট লিফটিং-এর অনুশীলন।

২০১৪ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পদক জেতার পরে মীরা চানু রাতারাতি একজন বিশ্ববিখ্যাত স্টার সেলিব্রিটি হয়ে যায়। সে তখন দারুন ভাবে স্টারডম এনজয় করবেএটাই ছিল স্বাভাবিক। কারন, মানুষ তো সাফল্যের হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে দিশেহারা হয়ে যায়,আত্ম গৌরবের বিভোরতায় বিভোর হয়ে তার যাবতীয় অতীতকে ভুলে যায়,আর মনে রাখতে চায় না। অতীতে যারা তাকে একদিন সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন তাদেরও আর মনে রাখে না। এটাই আমাদের অভিজ্ঞতায় সাধারণত দেখা যায়।

কিন্তু, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও আমাদের মীরাবাই চানু যে অন্য ধাতুতে গড়া,তার প্রমান দিয়েছিলেন। এক বিস্ময়কর বুনিয়াদে মীরার কৃতজ্ঞতার বোধ প্রতিষ্ঠিত তার প্রমাণ পাওয়া গেল মীরার একটি চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে এবং তার আয়োজনের দৃষ্টান্তে।

তাই তিনি বিশ্ববিখ্যাত হয়ে দেশে ফিরেই খুঁজেছিলেন সেই ট্রাক ড্রাইভার মানুষ-জনকে,যারা একদিন মীরার অনুশীলনে মীরাকে সহযোগিতা করেছিলেন। মীরার ডাকে প্রায় ২০০ জন ট্রাক ড্রাইভার সেদিন সাড়া দিয়েছিল।মীরার সাথে তারা সকলে এক জায়গায় দেখা করলেন,মীরা সকলকে লাঞ্চ খাওয়ালেন,সকলের হাতে স্পর্শ করার জন্য দিলেন তার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পদকটি। মীরা চানু তাদের প্রত্যেকের  হাতে তুলে দিলেন নতুন জামা,মণিপুরী স্কার্ফ। এমনকি বড়োদের পায়ে হাত দিয়ে মীরা প্রণামও করেছিলেন। সে এক অনিন্দ্যসুন্দর মুহূর্ত। যা সত্যিই বিরল আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায়।

মণিপুর পুলিশের চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর।

ইতিহাস মনে রাখবে, অলিম্পিকে পদক জয়ের কথা,কমনওয়েলথ গেমসে পদক জয়ের কথা।আমাদের সোনার মেয়ে মীরাবাই চানু-র কথা। কিন্তু আমরা মনে রাখবো এক মহা মূল্যবান শিক্ষনীয়  কথা সেটি হলো, মানুষের আশীর্বাদ  জীবনে বিনম্রতায় দুহাত দিয়ে কুড়িয়ে নিতে হয়। আর সেই আশীর্বাদ পেলে তাকে এই ভাবেই সযত্নে লালন পালন করতে হয়,সম্মান জানাতে হয়। বিনম্রতায় কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়।

কারন,আমাদের জীবনে,নানান অভিজ্ঞতায় না চাইতেই অভিশাপ অনেক আসে, আশীর্বাদ, সে তো বড়ই দুষ্প্রাপ্য, পরম পাওয়া, হাতে গোনা যায়।

কথায় আছে না”count your blessings…”

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.