পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
মানুষের জীবন রক্ষার জন্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতই জরুরি, অতি জরুরি হল তার শারীরিক চিকিৎসা এবং সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।
কিন্তু, এটা বাস্তব যে বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার আমাদে এ দেশে ওষুধের দাম হুহু করে বেড়েছে। গত কয়েকমাসে প্রায় এগারো/ বারোটি অত্যাবশ্যক ওষুধের মূল্যের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।যার ফলশ্রুতিতে সেই ওষুধগুলির দাম বাড়বে প্রায় দেড়গুণ। মানে পঞ্চাশ পারসেন্ট হারে।
এই অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে গ্লুকোমা( চোখের), হাঁপানি (Asthma), থ্যালাসেমিয়া, যক্ষা (tuberculosis/ টি.বি) ইত্যাদি রোগের জন্যে প্রথম ধাপের ওষুধগুলো ( first line drugs) রয়েছে। তাছাড়াও, বেঞ্জাইলপেনিসিলিন, ষ্ট্রেপ্টোমাইসিন, এট্রোপিন, (টি.বি এবং অন্যান্য সিরিয়াস রোগের চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজনীয় এই গ্রুপের ওষুধ গুলি), সালবিউটামল ট্যাবলেট, ইনহেলার,(ফুসফুস, শ্বাসকষ্ট-এর জন্যে ব্যবহৃত), antibiotic সেফাড্রক্সিল,থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার জন্যে ব্যবহৃত ডেস্ফেরিওক্সামিন ইনজেকশন, মানসিক রোগের জন্যে ওষুধ লিথিয়াম ইত্যাদিগুলি রয়েছে।
২০২১ সালে অত্যাবশ্যক তালিকাভুক্ত ওষুধের দাম প্রায় এগারো পারসেন্ট হারে বাড়িয়েছিল National Farmacutical Priceing Authority (এন পি পি এ)। আবার ২০২৩ সালে আবার বেড়ে যাওয়া মুল্যের ওপরে আরও বারো পারসেন্ট হারে দাম বেড়েছিল। আর এই এবছরে,২০২৪ সালের এখন এক ধাক্কায় পঞ্চাশ পারসেন্ট হারে দাম বেড়ে গেল।
ভাবুন একবার।আর এই ওষুধের দাম বাড়ানোতে অন্যান্য ওষুধগুলোর দামও বেড়ে গিয়েছে হুহু করে। আর এর রিফ্লেক্সন বা এই দাম বাড়াতে,তার প্রভাবে সমাজের যে সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মারাত্মকভাবে,তারা হচ্ছেন এই আমরা। অতি সাধারণ মানুষের দল।
এমনিতেই বাজার এখন আগুন ছোঁয়া।পাশাপাশি এই ওষুধের দাম প্রচন্ডভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। যদিও মানুষের উপার্জন তেমনভাবে বাড়েনি।যে তিমিরে ছিল প্রায় সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে মারাত্মক। অনেক পরিবারে অসুস্থ মানুষগুলো রোজ ঠিকমতো ওষুধ খাচ্ছেন না। যাদের মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় বলা হয় drug or medicine defaulter…। যার ফলে ক্ষতি হচ্ছে হাই ব্লাড প্রেশারের রুগীদের, ডায়াবেটিস রুগীদের,মতো মানুষদের।
শুধু তাই নয়,অসুস্থ হওয়ার পরে ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন মতো ওষুধপত্র রোগী বা রোগীর বাড়ির লোকেরা কিনছেন অল্প করে,কারন, প্রথম দু/তিনটা ওষুধ খাওয়ার পরে একটু সুস্থতা আসার সাথে সাথেই সেই প্রয়োজনীয় ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করছেন না সংশ্লিষ্ট রোগী বা রোগীর পরিবারের মানুষজন। যার ফলে কিছুদিন পরে আবার সেই রোগের পুনরাগমন ঘটিছে রোগীর শরীরে।
গত ১১ অক্টোবর, ২০২৪ এই বিষয়ে একটি প্রবন্ধ (New England Journal of Medicines এ প্রকাশিত,” The failling Health সিস্টেম”) থেকে জানা যায়, যে,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation) এই মনোভাব প্রকাশ করেছেন যে বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকার,সেদেশের এবং অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলির নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।আর মানুষকে সুস্থ থাকার এবং রাখার জন্যে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
এই নির্দেশ ইতিমধ্যেই চলে এসেছে আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।
এখন অপেক্ষা আমাদের যে আমাদের সরকার কি পদক্ষেপ নেন।তবে আমাদের অনুরোধ, যে প্লিজ আমাদের বাঁচতে দিন। প্লিজ প্লিজ প্লিজ সাধারণ মানুষকে নিয়ে একটু ভাবুন। ভাবুন, ভাবুন, প্লিজ ভাবুন।