পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
পৌরাণিক যুগ থেকে চলে আসছে দেবী সরস্বতীর পুজো। সরস্বতীর পুজো শুধু আমাদের এই বাংলায় নয়,সারা দেশেই এই আরাধনা সেই কোন প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে। সরস্বতী আরাধনার বিষয়টি পাওয়া যায় বেদ,পুরাণ,উপনিষদ,মনসা মঙ্গল কাব্য,চন্ডী মঙ্গল কাব্য প্রভৃতি সুপ্রাচীন গ্রন্থগুলোতে। প্রাচীনকালে দেবী পূজিতা হতেন যজ্ঞের দেবী সনাতনী দেবী হিসাবে।সাথে সাথে তিনি জ্ঞান,জ্যোতিঃ,এবং সুরের দেবী হিসাবেও পূজিতা হতেন। যে পরম্পরা আজও চলে আসছে।
আমাদের ভারতবর্ষে দেবী সরস্বতীর আরাধনা হয় সর্বত্র।
এর পাশাপাশি আরো জানা যায় যে বৈদিক যুগে গঙ্গা নদীর উপকুলের সাথে সাথে সরস্বতী নদীর তীরেও বৈদিক যজ্ঞের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হোত। দেবী সরস্বতী বিভিন্ন নামে বিভিন্ন স্থানে আরাধিতা হতেন। যেমন, বাগদেবী, শ্রীদেবী, পাবকা,শতরুপা, বাজিনিবতী,বিয়াবসু,
অক্ষরময়ী,বীণাপানি, বীণাবাদিনী, প্রমুখ।
আমাদের দেশের বাইরেও জাপানে,মায়ানমারে,ইয়াঙ্গনে,মালয়েশিয়ায়,ইন্দোনেশিয়ায়,চীনে,শ্রীলঙ্কায়,বাংলাদেশে,প্রভৃতি দেশেও দেবী সরস্বতী বিভিন্ন নামে পূজিতা হন। জাপানে দেবীর নাম বেনতেন্ সামা, তাঁর হাতে থাকে বিউয়া( বীণা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র), চীনে দেবীর নাম ম্যোন্-ত্যেং। কোথাও দেবীর নাম বেন্-জামিনি, দৈবেনজৈ-তেন্, তেন্-নিও, প্রমুখ।
আমাদের বাঙলাতে দেবী সরস্বতী যেমন প্রতি বিদ্যাঙ্গনে আরাধিতা হন,তেমনই,তিনি প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষ-এর পঞ্চমী তিথিতে পুজিতা হন–” নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।// বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাং দেহী নমোহস্তুতে।”
“ভদ্রকাল্যই নমোঃ নিত্যং সরস্বত্যৈ নমোঃ।// বেদ-বেদাঙ্গ বেদান্ত বিদ্যাস্থানেভ্য এবচ।।”
শিশু,কিশোর-কিশোরী সহ যে কোন বয়সের নারী পুরুষ নির্বিশেষে বিদ্যার দেবী,জ্ঞানের দেবী,সুরের দেবী,মা সরস্বতীর আরাধনা করে থাকে।এটাই হোল আমাদের ঐতিহ্য এবং পরম্পরা।