স্বাধীনতার লড়াইয়ে স্মরণীয় বীরদের শ্রদ্ধার্ঘ্য

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে স্মরণীয় হয়ে আছেন ৭২ বছরের বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা। স্মরণে আছেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের অন্যতম বিপ্লবী নায়িকা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, শ্রদ্ধায় মনে পড়ে বিপ্লবী বীনা দাস (নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাগুরু কটকের র‍্যাভেনশ স্কুলের হেডমাস্টার মশাই বিপ্লবী বেনীমাধব দাসের মেয়ে),নীরা আর্য (যিনি তার স্বামী কে খুন করেছিলেন, কারন তার স্বামী ব্রিটিশের হয়ে নেতাজীকে হত্যা করতে গিয়েছিলেন),কল্পনা দত্ত(যোশী), বিপ্লবী ইলা মিত্র, সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতমা নেত্রী অলকা মাঝি, পাঞ্জাবের দুর্গা দেবী, শহীদ ভগৎ সিং-এর মা, দিদি, বৌদি, প্রমুখ মহিয়সী বীরাঙ্গনাদের কথা আমাদের বিনম্রতায় স্মরনে রাখতে হবে। স্মরনে রাখতে হবে আসামের গিরিজা ফুকন, নিশি বরদলই, কমলা সইকিয়া, প্রমুখদের কথা। মনে রাখতে হবে কলকাতার মেটিয়াবুরুজের সেই প্রতিমা বৌদির কথা, যিনি মায়ের মতো দুদিন নিজের কাছে রেখেছিলেন, খাইয়েছিলেন নিশ্চিত মৃত্যুর আগে, রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের আগে বিনয় বাদল দীনেশ এই তিন মহা বিপ্লবীদের ক্যাপ্টেন বিনয় বসুকে, যিনি ছিলেন সেই সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তারির ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।

ভুলতে কি পারি বিহারের সুনন্দা মিশ্রের কথা,মায়া দেবীর কথা, তাদের আত্মত্যাগের কথা। সুদুর মনিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের সেইসব বীরাঙ্গনাদের কথা শ্রদ্ধায় স্মরনে রাখতে হবে যারা নেতাজীর আজাদ হিন্দ বাহিনীর মহিলা স্কোয়াডের নেত্রী ছিলেন,ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। মনে রাখতে হবে নেতাজীর আজাদ হিন্দ বাহিনীর মহিলা স্কোয়াড…ঝাঁসী রানী লক্ষীবাঈ বাহিনীর ক্যাপ্টেন ডাঃলক্ষী স্বামিনাথন(পরে লক্ষী সায়গল)-এর কথা,এবং সেই বাহিনীর হাজার হাজার দেশে থাকা, বিদেশে থাকা ভারতীয় বিপ্লবী নারীদের কথা, তাদের জীবনের আত্মত্যাগ, অবদানের কথা। এসব ঋণ কোনো ভারতীয়ই সারা জীবনেও শোধ করতে পারবে না।

অবশ্যই আমরা ঋণী সেইসব বিপ্লবীনি মায়েদের কাছে,যারা সমাজের ভাষায় নিষিদ্ধপল্লীর, সেইসব ভাগ্য বিড়ম্বিতা মহিলারা কিন্তু দিনের পর দিন  গোপনে কত বিপ্লবীকে মায়ের স্নেহ দিয়ে,বোনের স্নেহ দিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের সমস্ত অত্যাচার সহ্য করেও নিজেদের আশ্রয়ে রেখেছিলেন, সেসব সত্য কাহিনী শুনলে চোখ দিয়ে কান্না ঝরে পড়ে অঝোর ধারায়।

আজ ৭৫ বছরের স্বাধীনতার উদযাপনের দিনে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে আমাদের দেশের,বিদেশের সেইসব বীরাঙ্গনা নারীদের কথা বিনম্র চিত্তে স্মরণ করার মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের দেশ মাতৃকাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবো।

আসুন, আজ আমরা সেই পবিত্রতায় শপথ গ্রহন করি যে আমরা আমাদের দেশকে আমাদের চোখের মণির মতো রক্ষা কোরব। দেশের সংহতি,সম্প্রীতি, সংস্কৃতি, পরম্পরা আমরা রক্ষা করবো মহামুনি দধিচীর মতো আমাদের শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে,আমাদের বুকের পাঁজর দিয়ে।

আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজগুরু, মোহনলাল ধিংড়া, উধম সিং, আসফাকউল্লা, বিসমিল, হবিবুর রহমান, মোহন সিং, প্রফুল্ল চাকী, ১৩ বছরের টেগরা বল, ১৬ বছরের ক্ষুদিরাম..বিনয় বাদল দীনেশ, কানাইলাল দত্ত, সত্যেদ্রনাথ বসু, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, প্রমুখ সহ আরও অসংখ্য বীর শহীদদের মা, দিদি, বোন, স্ত্রীদের আত্মত্যাগ,অবদান…

তোমাদের পদপ্রান্তে রেখে গেলাম আমাদের জন্মের না শোধ করতে পারা সারা জীবনের ঋণ….।

আরও পড়ুন :

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে,  পরিবারতন্ত্রকে নিশানা মোদীর

অনুব্রতর গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘কেষ্ট’র পাশেই ‘দিদি’

স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় নারীদের অবদান

২০২৪-এ কাশ্মীরে বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতুতে চলবে ট্রেন?

Related posts

১৯শে মে বাঙালি ও বাঙলা ভাষার এক ইতিহাস

আমাদের দেশ, আমাদের দ্বেষ-বিদ্বেষ এবং রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না