প্রথম পাতা প্রবন্ধ মারাত্মক বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের এই পৃথিবী…

মারাত্মক বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের এই পৃথিবী…

257 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

ঠিক এই মুহূর্তে শহরে, মফস্বলে, এমনকী গ্রামাঞ্চলেও আমরা শীতের আশায় সোয়েটার, মাফলার, জ্যাকেট, লেপ-কম্বল নিয়ে তীর্থের কাকের মতো হাপিত্যেশ করে রয়েছি। কিন্তু, শীতের দেখা নেই। এ বছরে গত কয়েক বছরের মতো তেমন বৃষ্টিও হয়নি। আর গরম পড়েছিল খুব। কিন্তু, হঠাৎ আবহাওয়ার এই মুখভার কেন?

এসব নিয়ে আলোচনায় প্রথমেই আমাদের নিজেদের দায়ী করা উচিৎ। একরাশ উৎকন্ঠা আর উদ্বেগ নিয়ে ঠিক এইভাবেই কথাগুলি বলেছেন গত শুক্রবার (১লা ডিসেম্বর, ২০২৩) রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব মিস্টার আন্তোনিও গুতেরেস দুবাইতে অনুষ্ঠিত ২৮ তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, রাস্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (UNFCC)-এর বাস্তবায়ন পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী সংস্থার নাম Conference of Parties– বা এককথায় COP (কপ্)। বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রতি বছর (১৯৯৫ সালে প্রথম জার্মানের বার্লিনে এই কনভেনশন হয়েছিল) সারাবিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন হয়ে আসছে। সারা বিশ্বের ২০০ টি দেশের প্রতিনিধি এই কনভেনশনে উপস্থিত থাকে।সকলে মিলে প্রায় ১০ বছর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে,আবহাওয়ার ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রী বৃদ্ধিতে আটকে রাখতে হবে।কিন্তু চিন্তার বিষয় হল,সেই সিদ্ধান্ত কোনভাবেই বাস্তবায়িত হয়নি আজ অবধি।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সংস্থার সভাপতি মিস্টার সিমন স্টেইল বলেন যে এই মুহূর্তে জলবায়ুর যা পরিস্থিতি তাতে করে আর ১০ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে পানীয়জল,খাদ্য,পরিবেশ, ইত্যাদি বিষয়গুলি এক চরম সংকটের সম্মুখীন হবে। আন্টার্ন্টিকায় প্রভুত বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে চলেছে,এবং যাবে, ফলে তলিয়ে যেতে পারে অনেক শহর,দেশ।এছাড়া, সমুদ্রগর্ভ অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ,ফলে,ঘন ঘন বিধ্বংসী ঘুর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে পৃথিবীর মাটিতে,হবে ভুমিকম্পের তান্ডব,খরা,বন্যা,ইত্যাদি। যথেষ্ট পরিমানে বৃষ্টি না হওয়ার ফলে চাষ-আবাদে সংকট দেখা দেবে। বাড়বে প্লেগ,ডেঙ্গু,ম্যালেরিয়ার মত মারণব্যাধিগুলি।

এবারের কনভেনশনের বিভিন্ন সমীক্ষাতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে,২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বাড়ার গতি ২° ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে(সম্ভব হলে ১.৫° ডিগ্রির নীচে/যা ২০১৫ সালে প্যারিস কনভেনশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল) নামিয়ে আনতে হবে। সমীক্ষায় বলা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা পুরণের স্বার্থে উষ্ণায়ণের জন্য দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেনের মতো গ্রীনহাউস গ্যাসের নির্গমন অন্তত অর্ধেক করা উচিৎ বিশ্বের দেশগুলোতে ব্যবহারিক জীবনে।

সমীক্ষায় বলা হচ্ছে,এই উষ্ণায়ন-এর কারণে বিশ্বের নতুন পরিবেশে মানব বান্ধব উদ্ভিদ ও প্রাণী কমে যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এই রকম চলতে থাকলে আর বছর দশেকের মধ্যেই উদ্ভিদ আর প্রাণী মিলিয়ে প্রায় ৪০ টি প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিপন্ন হয়ে যেতে পারে আমাদের চেনাজানা প্রায় ১৭০ টি পক্ষীকুল।বৃষ্টিপাতের রকমফের আর তাপমাত্রা বাড়ার ফলে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা হিসাবে ম্যালেরিয়ার ভেক্টর মশা কিম্বা প্লেগের ভেক্টর ইঁদুরের প্রাচুর্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহ রোগজীবাণুর তীব্রতার রকমফের ঘটায়।জলবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত হয়।কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসাবে বলা হচ্ছে যে,আমাদের দেশে এখন জলবাহিত রোগে প্রতি বছর ৪কোটি মানুষ আক্রান্ত হন,প্রায় ১৫ লক্ষ শিশু মারা যায়। বিশ্বের সমীক্ষায় বলা হচ্ছে যে সারা দুনিয়ায় বছরে ৯০লক্ষ মানুষ মারা যায়।

এই সংকট থেকে পরিত্রান পেতে আমাদের সবুজায়ন করতে হবে বেশি বেশি করে,গাছ কাটা, বন জঙ্গল উজাড় করা চলবে না। গাড়ি আর কারখানার ধোঁয়া কমাতে হবে। সৌরশক্তি চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হবে।মাটির গভীরে যায় শিকড়,এমন গাছ বসাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতেই হবে। বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুত।পরিবেশ জলবায়ু সচেতন হতে হবে সকল নাগরিকদের।

অতএব, আমাদের দেশের মতো জনবহুল উন্নয়নশীল দেশের সরকারি-বেসরকারি সমস্ত ক্ষেত্রে এই জলবায়ু এবং পরিবেশের স্থিরতা বজায় রাখতে উদ্যোগ, পরিকল্পনা নিতেই হবে,নইলে আগামী দিনে আমাদের দেশ তো বটেই,সারা পৃথিবী এক চরমতম সংকটের সম্মুখীন হবে।

অতএব আসুন আমরা সকলে সচেতন হই আমাদের জন্যে,আমাদের সন্তান- সন্ততিদের জন্যে।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.