ওয়েবডেস্ক : সুবিমল ‘চুনী’ গোস্বামী। ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে এমন ‘অলরাউন্ডার’ সম্ভবত আর পাওয়া যাবে না। দেশের ইতিহাসে সম্ভবত সেরা ফরোয়ার্ড, সীমিত দক্ষতা নিয়েও ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল এক ক্রিকেটার।
নমুনা? ১৯৬২-তে তিনি তখন হায়দরাবাদে। একই সঙ্গে আইএফএ এবং সিএবি থেকে টেলিগ্রাম পেলেন। দু’টি রাজ্য দলেই তিনি সুযোগ পেয়েছেন। যোগ দিতে হবে। শুনলে অনেকে অবাক হয়ে যেতে পারেন, তিনি ক্রিকেট দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।
বহুমুখী প্রতিভাই বটে! পঞ্চাশ-ষাটের দশকে মোহনবাগান ও ভারতের হয়ে ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অধিনায়কত্ব করেছেন চুনী গোস্বামী। ১৯৬২-৭৩ সালের মধ্যে বাংলার হয়ে ৪৬টি ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
১৯৭১-৭২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে খেলেছিল বাংলা। মোহনবাগানের হয়ে হকিও খেলেছেন এই প্রবাদপ্রতিম ক্রীড়াবিদ। তার পাশাপাশি তিনি সাউথ ক্লাবে টেনিসও খেলেছেন চুটিয়ে। সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্রীড়াজগতের অলরাউন্ডারই বলা চলে তাঁকে।
আরও পড়ুন : ছুৎমার্গ ভেঙে মহিলাদের হয়ে ব্যাটন ধরেছিলেন ‘মাদার’ দুর্গা
১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম। মাত্র ন’বছর বয়সে যোগ দেন মোহনবাগান জুনিয়র টিমে। আজীবন মোহনবাগানেই থেকে গিয়েছেন। শোনা যায়, জে সি গুহ ইস্টবেঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ষাটের দশকে বাজারে ঝড় তোলা ফিয়াট গাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। তাতেও ‘সবুজ-মেরুন ঘর’ থেকে ভাঙানো যায়নি চুনীকে।
তাঁর দুর্ধর্ষ গতি এবং ড্রিবলিংয়ের সামনে নতজানু হতে দেখা গিয়েছে অনেক বাঘা বাঘা ডিফেন্ডারকে। সঙ্গে দুরন্ত ট্র্যাপিং, সুচতুর পাসিং। কেউ কেউ মনে করেন, সেই সময়ে চুনীর ড্রিবলিং ছিল ব্রাজিলীয় কিংবদন্তিদের সঙ্গে তুলনীয়।
অন্যদিকে, ১৯৬৬-তে গ্যারি সোবার্সের বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে হারানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। ১৯৭১-৭২ মরসুমে তাঁর নেতৃত্বে বাংলা রঞ্জি ফাইনালে উঠে হেরে যায় মুম্বইয়ের কাছে। তত দিনে ইডেন দেখে নিয়েছে দুঃসাহসিক চুনীকে।
হায়দরাবাদের হয়ে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার রয় গিলক্রিস্টকে সামলানোর পরীক্ষা দিতে হয় হেলমেটহীন অবস্থায়। গিলক্রিস্টের খুনে মেজাজ এবং যথেচ্ছ বাউন্সার-বিমার ব্যবহারের জন্য যে ম্যাচ কুখ্যাত হয়ে রয়েছে।
পঙ্কজ রায়কে বিমার ছুড়ে মারতে গিয়েছিলেন গিলক্রিস্ট। ছয় নম্বরে নেমে ৪১ রান করে ফলো-অন বাঁচান চুনী।
ক্রিকেট ও ফুটবল— দুই খেলাতেই এ-রকম দুরন্ত পারফরম্যান্স! না, তেমনটা আর দেখা গেল কই?