প্রথম পাতা জন্মদিন ছুৎমার্গ ভেঙে মহিলাদের হয়ে ব্যাটন ধরেছিলেন ‘মাদার’ দুর্গা

ছুৎমার্গ ভেঙে মহিলাদের হয়ে ব্যাটন ধরেছিলেন ‘মাদার’ দুর্গা

338 views
A+A-
Reset

জন্মদিন : তিনি চেয়েছিলেন শ্রমকে গুরুত্ব দিতে, শ্রমের ধরনকে নয়। কেউ যদি ঝাড়ুদারের কাজ করেন, তাহলে যেন সেই কাজটাই এত নিখুঁত করে করেন যে ৫ জন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হন, কে পরিষ্কার করেছেন। মৃত্যুর এক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি। তিনি দুর্গা খোটে।

মরাঠি এবং হিন্দি ফিল্মের ‘মাদার’। তার সময়ে সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে ফিল্মে যোগ দেওয়া তিনিই প্রথম মহিলা। যিনি সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে ৫০ বছর ধরে দেশবাসীকে বিনোদন দিয়ে গিয়েছেন।

অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হলেও কোনও কাজকেই ছোট, বড় কিংবা খারাপ হিসাবে দেখেননি দুর্গা। শুধু মাত্র তাঁর সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য সমস্ত সামাজিক ছুঁৎমার্গ ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি।

তখন ফিল্মে মহিলাদের কোনও জায়গা ছিল না। মহিলাদের চরিত্রেও কোনও পুরুষই অভিনয় করতেন সাধারণত। এমন সময়েই অসম্ভব সাহসী দুর্গা ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন এবং নায়িকা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলেন।

২০০০ সালে ইন্ডিয়া টুডে প্রকাশিত ‘ভারতকে আকার দেওয়া ১০০ জন ব্যক্তি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দুর্গারও নাম প্রকাশিত হয়।

তাঁর প্রকৃত নাম ভিটা ল্যাড। পরিবার গোয়ার বাসিন্দা। সেখান থেকে পরে মুম্বইয়ে চলে এসেছিল তাঁর পরিবার। ১৯০৫ সালে মু্ম্বইয়েই জন্ম তাঁর।

কলেজে পড়ার সময়ই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ খোটের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরও তিনি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু খুব অল্প দিনের মধ্যেই স্বামীর মৃত্যু হয়। তিনি তখন সবে ২৬। মাথার উপর ছিল তাঁদের দুই সন্তানকে বড় করার চাপ। কারও মুখাপেক্ষি নে হয়ে নিজেই সন্তানদের বড় করার দায়িত্ব তুলে নেন দুর্গা। শুরু হয় চাকরির খোঁজ।

ঠিক সে সময়ই এক বোন তাঁকে ফিল্মের কথা বলেন। প্রযোজক জেবিএইচ ওয়াদিয়ার বন্ধু ছিলেন তাঁর বোন। ওই প্রযোজক তখন ‘ফরেবি জাল’ নামে এক নির্বাক ফিল্ম করার কথা ভাবছিলেন। বোন সেই ফিল্মেই তাঁকে নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রযোজক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দেন।

১৯৩১ সালের এই নির্বাক ফিল্ম বক্স অফিসে একেবারেই হিট হয়নি। উপরন্তু প্রচুর সমালোচনা শুরু হয় দুর্গাকে ঘিরে। এমন বড় ঘরের মেয়ে দুর্গার অভিনয় করাটা দর্শক একেবারেই মেনে নিতে পারছিলেন না।

পরের বছরই ‘অযোধ্যা কা রাজা’ নামে আরও একটি মরাঠি ফিল্ম মুক্তি পায় তাঁর। ফিল্মে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দর্শকদের ফিল্মটি দেখতে বাধ্য করেছিল। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ৫০ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে তিনি ২০০টি ফিল্মে অভিনয় করেছেন। ঝুলিতে রয়েছে প্রচুর থিয়েটারও।

আরও একটি চিরাচরিত প্রথা ভেঙে ভেলেছিলেন তিনি। তখন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মাইনে দেওয়ার চল ছিল। তাঁরা কোনও একটি ফিল্ম সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতেন। সেই সংস্থার হয়ে ফিল্ম করতেন এবং মাসের শেষে নির্দিষ্ট টাকা বেতন পেতেন। অভিনেত্রী দুর্গা প্রথম এই বেতন নীতি ভেঙে বেরিয়ে আসেন।

 ‘স্টুডিয়ো সিস্টেম’ ভেঙে তিনি প্রথম ফ্রিল্যান্স শিল্পী হয়ে ওঠেন এবং ফিল্ম পিছু পারিশ্রমিক নিজে ঠিক করতে শুরু করেন।

ইতিহাস তাঁকে আরও একটি কারণে মনে রেখেছে। সে সময় প্রথম হাতে গোনা কয়েক জন মহিলা ফিল্ম প্রযোজনা বা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দুর্গা। ১৯৩৭ সালে ফিল্ম ‘সাথী’-র প্রযোজনা এবং পরিচালনা দুটোই তিনি করেছিলেন।

কেরিয়ারের শেষ ৩ বছর তিনি পুরোপুরি প্রযোজনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর সংস্থা প্রচুর শর্ট ফিল্ম, বিজ্ঞাপন এবং তথ্য চিত্র তৈরি করেছে। মরাঠিতে আত্মজীবনীও লেখেন তিনি। ১৯৯১ সালে মুম্বইয়ে ৮৬ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও ইতিহাসের পাতায় তিনি আজও অমর হয়েই রয়ে গিয়েছেন।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.