ওয়েবডেস্ক : নেতাজি, বাঙালির মনোভূমিতে লীন অনন্য আবেগ। ‘বৃহৎ’-এর প্রতি প্রণতির সম্মেলক বাসনা। অসম্ভবকে সম্ভব করতে চেয়েছিলেন নেতেজি সুভাষ। জীবন তুচ্ছ করে স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। তাঁর তুলনীয় স্বপ্নদর্শী নেতা পরাধীন বা স্বাধীন ভারতে আর কখনও খুঁজে পেলেম না আমরা।
এই স্বপ্নের গৌরবে আজও ভর করতে চায় বাঙালি। রাজনীতির খেলায় নামে স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল। এখানেই বেধে যায় মুশকিল। বাঙালির এই স্বপ্ন, আবেগ, না বুঝেও জোর করে বোঝার ভান করেন কেউ কেউ।
বাঙালির মানসে ঠিক কোথায় নেতাজির স্থান, সেই সন্ধান না পেয়েই শুরু করেন ভিত্তিহীন মাতামাতি। নেতাজি জন্মবার্ষিকীর আগে এই আকস্মিক হইচই যেমন দৃষ্টিকটু তেমনই পীড়াদায়ক।
ভোটের তাগিদে নেতাজিকে স্মরণ করিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভুলে গেছেন যে, কলকাতা বন্দরের নাম তাঁরা শ্যামাপ্রসাদ রেখেছেন, যখন ডকের নামে আছেন নেতাজি।
ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে এই এঁরাই নেতাজিকে জওহরলাল নেহরুর ‘শত্রু’ হিসাবে তুলে ধরেছেন। এঁরা ইতিহাস জানেন না। নেতাজির জন্মদিনকে ‘পরাক্রম দিবস’ নাম দিতে চেয়েছেন।
কেননা ঘোড়ায়-চড়া নেতাজিকে তাঁরা শুধু পরাক্রমশালী যোদ্ধা ভাবেন, দেশের ঐক্যস্বপ্নে বিভোর দেশপ্রেমিক ভাবেন না। ‘পরাক্রম’ শব্দটি হিন্দিতে সুমধুর হলেও বাংলায় যে এর দ্যোতনা নেতিবাচক। তা তাঁরা জানেন না। কারণ তাঁরা বাংলা ভাষাই জানেন না।
আরও পড়ুন : জন্মদিন : শান্তনু মৈত্র
বস্তুত তেইশ জানুয়ারির জন্য ‘দেশপ্রেম দিবস’ নামই উপযুক্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে সুভাষচন্দ্র ‘সেরা দেশপ্রেমিক’, বলে গিয়েছিলেন স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী। তিনি বলেছিলেন, ‘সুভাষ একাই দেশকে শিখিয়েছেন, কী ভাবে ‘শ্রেণি-সম্প্রদায় নির্বিশেষে আত্মত্যাগ ও ঐক্য’ তৈরি করতে হয়’।
প্রধানমন্ত্রী কি শুনতে পাচ্ছেন? শ্রেণি-সম্প্রদায় নির্বিশেষে ‘ঐক্য’ ছাড়া কোনও কিছু দিয়েই নেতাজিকে সম্মান দান করা যাবে না। কোনও মাল্যদান, বাণী-বিতরণ, নামকরণ বা ‘পরাক্রম দিবস’ দিয়ে নয়।