ইমনকল্যাণ সেন
লোকসভা ভোটের আগে দল বদলে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন বরানগরের তিন বারের বিধায়ক তাপস রায়। পদ্ম-প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনে। কিন্তু হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এখন রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণা হতেই ফের চর্চা শুরু হয়েছে তাপসকে নিয়ে।
কেন তৃণমূল ছেড়েছিলেন তাপস? আর কেন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি? এই দুই প্রশ্নের মাঝখানে রয়েছে যে বিষয়টি, তা হল তাঁর বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি-র হানা। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর একাধিক বার তাঁর মুখেই শোনা গিয়েছে সে কথা। তিনি দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, বাড়িতে ইডি অভিযানের পর তৃণমূল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডাকেননি। সংবাদমাধ্যমে বার বার এমনই অভিযোগ করেছেন তাপস।
ফলে তাঁর বাড়িতে ইডি হানা, তৃণমূল ছাড়া, তার পরেই বিজেপিতে যোগ দিয়ে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া ইত্যাদি নিয়ে হাজারও যুক্তিতক্ক চলেছে। কে না জানে, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে ছিলেন তাপস। ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১-এর ভোটে পর পর তিন বার জিতে হ্যাট্রিকও করেছিলেন। এ বার কলকাতা উত্তর থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েও অনেক আশা জাগিয়েছিলেন গেরুয়া শিবির। কিন্তু ফলাফলে হতাশা ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই বিজেপির একাংশের ‘বিদ্রোহ’ আর সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রের মন্ত্রী হতে তাঁর জায়গায় কাকে রাজ্য সভাপতি করা হবে, সেসব নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা ঝড় উঠেছে। তাপস রায় কোথায়? সদ্য তৃণমূল থেকে এসে লোকসভার টিকিট পেয়ে যাওয়া হেরো প্রার্থীকে কতটা গুরুত্ব দেবে বঙ্গ-বিজেপি? সে প্রশ্নের উত্তরও এখন আলোচনার বাইরে। তবে রাজ্যের চার বিধানসভার উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো মহল থেকে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাপসের নাম।
আগামী ১০ জুলাই রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা এবং মানিকতলা কেন্দ্রে উপনির্বাচন । এগুলির মধ্যে মানিকতলা কেন্দ্রটি পড়ে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই। এ বারের লোকসভা ভোটে খুব অল্প মার্জিনে হেরেছেন মানিকতলা বিধানসভায়। এখানে মোট ভোট পড়েছে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৩২টি। যার মধ্যে সুদীপ পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৯৬৪ ভোট, তাপস পেয়েছেন ৬৩ হাজার ৩৮৯টি ভোট।
একটি মহলের মতে, মাত্র হাজার তিনেক ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা তাপসকে মানিকতলা উপনির্বাচনে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। এই কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত সাধন পান্ডের স্ত্রী সুপ্তি পান্ডেকে প্রার্থী করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিজেপির তরফ থেকে এখনও কোনো নাম প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে, তাপসের নাম নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। কিন্তু তৃণমূলের বিধায়ক পদ ছেড়ে বিজেপির সাংসদ হতে গিয়ে বিফল হওয়া তাপস কি আদৌ সেই ‘রিস্ক’ নিতে যাবেন? সদ্য সদ্য লোকসভায় হেরেছেন। ফের বিধায়ক হতে গিয়ে যদি হাত ফসকে যায়? বাংলা প্রবাদে বলে ‘আমও গেল ছালাও গেল’, এর পরে কী আর পড়ে থাকবে?