প্রথম পাতা প্রবন্ধ আগামী দিনের একটি নীরব মহামারী—যার নাম স্থুলতা

আগামী দিনের একটি নীরব মহামারী—যার নাম স্থুলতা

71 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (world health organisation) এর মতে সারাবিশ্ব ব্যাপী শিশু সহ অধিকাংশ মানুষের স্থুলতা (Obesity) যেভাবে বেড়ে চলেছে,তা একটি এই মুহুর্তের এবং আগামীদিনের সারাবিশ্বেই এক জ্বলন্ত সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যে এবং তা ক্রমবর্ধমান রূপে দেখা দেবে।

সাধারণত Body Mass Index (BMI) ২৫ এর বেশি হলেই তা অতিরিক্ত ওজন বলে চিহ্নিত করা হয় মেডিকেল সায়েন্সে।আর সেটা ৩০ হলেই স্থুলতার শিকার বলে পরিগনিত হয়। এই প্রবণতা এখন সবচেয়ে বেশি দেখা দিচ্ছে শিশু,কিশোর কিশোরীদের মধ্যে।

স্ট্যাটিস্টিক্স অনুযায়ী আমেরিকায় প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে একজন স্থুলকায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে,১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সারা দুনিয়ায় ৫ বছর বয়স থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ১০ গুণ স্থুলতা বৃদ্ধির হার বেড়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল অবধি শুধু আমেরিকাতেই শিশুদের মধ্যে স্থুলতার হার বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ। আর শুধু আমেরিকাতেই ৭৫-৮০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই স্থুলকায় বলে চিহ্নিত হয়েছে।

এই মুহুর্তে আমাদের দেশে ১৫-২০ শতাংশ শিশু অতিকায় ওজন এবং স্থুলতায় ভুগছে। সারাবিশ্বে শৈশবকালীন স্থুলতায় ভুগছে যেসব দেশের শিশুরা তাদের মধ্যে প্রথম স্থান হোল চীনের,এবং দ্বিতীয় স্থানে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ, আর তৃতীয় দেশ হোল আমেরিকা।

এই স্থুলত্বের কারণ হোল খাদ্যাভ্যাস।কায়ুক পরিশ্রম না করা,ইত্যাদি। ফাস্টফুড খাওয়া অতিরিক্ত ভাবে,কায়িক কসরত একেবারেই নেই বলাই চলে,যথেচ্ছ চিনি মিশ্রিত পানীয়(কোল্ডড্রিঙ্ক) পান করা,লাগামছাড়া মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি,টেলিভিশন, ট্যাব,ভিডিও গেম,ইত্যাদির প্রতি দিনের ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা যুক্ত থাকা,সহ এইসব কাজেই আজ ব্যস্ত শৈশবকাল।তাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলি,সেণ্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম তার ফলে বিভিন্নভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।ক্যালরি জমছে শরীরে, ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্থুলতা। আর এর ফলে অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে নানা রকমের ব্যাধিসমুহ।

এই মুহুর্তে আমাদের দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশু স্থুলতায় আক্রান্ত। এরফলে তাদের মানসিক এবং শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করছে।তাদের ইনটেলিজেন্ট কোশেন্ট,এবং ইমোশোন্যাল কোশেন্ট হ্রাস পাচ্ছে।

Global Burden of Desease ২০১৭-১৮ সালের রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে স্থুলতার কারণে সারাবিশ্বে বছরে ৪০ লক্ষ থেকে ৭০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। তাই আজ এই সময়ে সারাবিশ্বে ওবেসিটি বা স্থুলতা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে এক রীতিমতো উদ্বেগ এবং আশঙ্কার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক নীরব মহামারী হিসাবে আগামীদিনে যার মুখোমুখি হবো আমরা। অতএব, সময় থাকতেই আমাদের,এবং আমাদের পরিবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য আমাদের কঠিন এবং সঠিক পথ অবলম্বন করতেই হবে।কোনও আবেগ বা তাৎক্ষণিক সমঝোতা সেখানে মোটেই চলবে না।

সকলে ভালো থাকুক।ভালো থাকুক আমাদের আগামীদিনের নাগরিকেরা।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.