পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
এমন একজন মানুষ ছিলেন তিনি,যিনি স্বামী বিবেকানন্দ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অনুরক্ত এবং এঁদের মত ও পথ অনুসারী। যিনি অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আন্দোলনে সুদুর উত্তর পশ্চিম সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন সত্য এবং অহিংসাকে মন্ত্র রূপে গ্রহন করে। তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলেন,যথাক্রমে, বাদশা খান,বাচা খান,ফকর্-ই-আফগান্, সীমান্ত গান্ধী ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাঁর আসল নাম ছিল খান আব্দুল গফফর খান।
তিনি ১৮৯০ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী অখন্ড ভারতবর্ষের উত্তর পশ্চিম সীমান্তের অখন্ড পাঞ্জাব-আফগান প্রদেশের উটমানজাই-তে( এখন খাইবার পাখতুনখোয়া/পাকিস্তান) জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম ছিল খান আব্দুল বাহারাম খান, মায়ের নাম ছিল আইসিয়া বিবি।
আব্দুল গফফর ছাত্রাবস্থায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ এবং মহাত্মা গান্ধীর প্রতি।তাই সেই সুদুর সীমান্ত প্রদেশে বাস করেও তিনি গ্রহণ করেছিলেন অহিংস আন্দোলনের পথ।তিনি সেখানে ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অহিংস পথ অবলম্বন করেই আন্দোলন করেছিলেন।পরে তিনি নেতাজী সুভাসচন্দ্র-এর প্রতি অনুরক্ত হন এবং ব্রিটিশ এর বিরুদ্ধে রণং দেহী মূর্তি ধারণ করেছিলেন। তিনি ভারববর্ষের স্বাধীনতার আন্দোলনে এক ইতিহাস।
তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বকবির কাছে এসেছিলেন ১৯৩৬ সালে। তার প্রিয় গান ছিল “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে,তবে একলা চলো রে…”। তিনি এই গান পুশতু ভাষায় অনুবাদও করেছিলেন।এছাড়াও কবিগুরুর অনেক লেখা তিনি পুশতু ভাষায় অনেবাদ করেছিলেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষে ভারত ভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি।সেই সময়ে তিনি মহাত্মা গান্ধী, নেহেরু,মহম্মদ আলি জিন্না,প্যাটেল প্রমুখ নেতাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করেছিলেন দেশ ভাগ না করার জন্য।কিন্তু ইতিহাস বড়ই নির্মম,দেশ ভাগ হোল।তিনি মহাত্মা গান্ধীকে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “আমাকে, আর আমার প্রদেশকে ঠেলে দিলেন জাহান্নমের দিকে,মৃত্যুর দিকে,কি অপরাধ ছিল আমাদের?”
তিনি মেনে নিতে পারেন নি এই দেশ ভাগ।তাই তিনি যে দল তৈরী করেছিলেন, “খুদা-ই-খিদমরগার” এবং “ন্যাশানাল আওয়ামী পার্টি”… সেই সব দল থেকে, রাজনীতি থেকে তিনি অনেক দূরে সরে গিয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে তাঁকে ” নেহরু পুরস্কার ” এবং ১৯৮৭ সালে খান আব্দুল গফফর খান তথা সীমান্ত গান্ধী -কে “ভারত রত্ন” সম্মান প্রদান করা হয়। তিনিই একমাত্র মানুষ যিনি স্বাধীনতার পরে তথাকথিত অ-ভারতীয় হয়েও “ভারতরত্ন”
সম্মানে সম্মানিত হন।যদিও তিনি মনে প্রানে অখণ্ড ভারতবর্ষের একজন মানুষ হিসাবে নিজেকে মনে করতেন।
এই মহান ঐতিহাসিক মানুষটি দু-দুবার শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন একবার ১৯৩৬ সালে,দ্বিতীয়বার সপুত্র ১৯৮৭ সালে।
পরের বছর ১৯৮৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী ভারতবর্ষের অমৃত সন্তান খান আব্দুল গফফর খান তথা বাদশা খান সীমান্ত গান্ধী এই দুনিয়া ছেড়ে বেহেস্তে চলে যান।
কাল তাঁর ১৩৩ তম জন্মবার্ষিকীতে রেখে গেলাম আমাদের লাখো কোটি সালাম, প্রণাম।