প্রথম পাতা প্রবন্ধ পৃথিবীর পদপ্রান্তে রেখে যাই বিশ্বশান্তি ও মৈত্রীর প্রার্থনা

পৃথিবীর পদপ্রান্তে রেখে যাই বিশ্বশান্তি ও মৈত্রীর প্রার্থনা

139 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

আজ থেকে প্রায় ৫৪০ বছর আগে এই বিশ্বের মাটিতে এসেছিলেন তিনি। যিনি তথাগত বুদ্ধদেবের পরে আমাদের বিশ্বকে শান্তি আর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন। ১৪৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহন করেছিলেন এই বাংলার মাটিতে জগন্নাথ মিশ্রের গরীবখানায় আর শচীদেবী-র কোল জুড়ে বিশ্বম্ভর মিশ্র তথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। যিনি আদ্যোপান্ত শান্তি আর মৈত্রীর এক দৃষ্টান্ত, এক ইতিহাস।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মদিনে আমরা যদি দেখি আমাদের এই পৃথিবী কেমন আছে, এই পৃথিবীর বাসিন্দারা কেমন আছেন,তাহলে দেখতে পাবো,যে,এক মর্মান্তিক অশান্ত পরিবেশে মানুষ আজ বিভিন্ন জায়গাতে,দেশে দেশে, রাজ্যে রাজ্যে শুধু শান্তিতে আর পরস্পরকে ভালোবেসে বাঁচতে চাইছে।

একটু খুলে বললেই বোঝা যাবে,কেন এই কথা বলা হোল। আমরা জানি যে ঘরের জানলা বন্ধ করে দিলেই কি বাইরের বাতাসকে আটকানো যায়? সে কি ঘরের ভিতরে আসবেনা? একটা রুমাল দিয়ে কি সূর্যকে আড়াল করা যায়? ঠিক তেমনই,নানান আজে বাজে বিষয় নিয়ে হুযুগে মাতামাতি করলেই কি আমাদের জীবনের আসল দুশ্চিন্তা আর থাকবে না? আমরা সব খবর রাখি,অনেক কিছু নিয়েই ভাবি,অনেক কিছুই জানি,কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব আজ যে সংকটের সম্মুখীন,তার কোনো খবর কি আমরা রাখি..?সেই খবর কি আমরা রাখি?

খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই বলা যায়,আমরা সিংহভাগ মানুষই জানিনা। যেমন আমরা জানিনা যে, ইউনেস্কো এবং ইউনাইটেড্ নেশনস্ অর্গানাইজেশান -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এই মুহুর্তে সারা বিশ্বের ৩৪ টি দেশ বিধ্বংসী যুদ্ধে মেতে আছে। আর যুদ্ধ মানেই তো,বারুদের আর পোড়া মানুষের গন্ধ। শুধু তাই নয়,যুদ্ধ মানেই গুলি,বোমা,আগুন,ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতিতে ধ্বংসস্তুপের হাহাকার,আর মানুষের কান্না। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়া। বিরাট প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যায় সাধারণ মানুষের জীবন,তাদের ভবিষ্যৎ, ইত্যাদি ইত্যাদি। এক কথায় রাজায় রাজায়,রাষ্ট্রের ভেতরে বাইরে সেই যুদ্ধে প্রাণ যায় আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষদের।

আচ্ছা, যুদ্ধ কেন হয়? কিসের জন্য যুদ্ধ হয়? ইতিহাসের সেই অতীত থেকে আজ অবধি সমস্ত যুদ্ধের মুল কারন হোল অন্যের ভৌগোলিক সীমানা দখল করা,নয়তো অন্য রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক,খনিজ সম্পদ,কিম্বা সেখানকার বাজার দখলকরে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করা,বিস্তার করা। তারই জন্য রক্তের হোলি খেলা। মানুষ খুন করা, নারীকে বেআব্রুর করা, ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, শিশুদের শৈশব হত্যা করা, তাদের অনাথ করা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু সাধারণ মানুষ যুদ্ধ,অশান্তি চায় না।কেউই মৃত্যুর মিছিল,ধ্বংসের তান্ডব দেখতে চায় না। আসলে যুদ্ধের বা অশান্তির কারন হলো কেবলমাত্র অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার মুনাফা বৃদ্ধি, শাসক রাজনৈতিক দলের সবকিছু কুক্ষিগত করার অপপ্রচেষ্টা,রাজ্যে রাজ্যে,রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে পরস্পরের দ্বন্দে ডেকে আনে মানুষের মৃত্যু, মানুষের সভ্যতাকে নিয়ে যায় বিধ্বংসী সর্ব্বনাশের দিকে।

আজকের এই পৃথিবীতে যেসব যুদ্ধ চলছে,তা দেখে অনেক তণ-বিশারদের মতামত যে, এই যুদ্ধ আনবিক যুদ্ধের মহড়া। সাধারণ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে রাষ্ট্রগুলি যে যার মতো নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী বিধ্বংসী মারনাস্ত্রের কার্যকারিতা পরস্পর যাচাই করে নিচ্ছে,বা বলা যায় এক পক্ষ অপর পক্ষকে দেখিয়ে দিচ্ছে তার শক্তির বহর।বিপরীতে সেও দেখাচ্ছে।মাঝখান থেকে মরছে সাধারণ অসহায় মানুষ।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো এই যে, এহেন পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বের গণমাধ্যম প্রায় নীরব এর বিরুদ্ধে।কিন্তু কেন? কিসের ভয়ে? কিসের বাধ্যবাধকতায়? কারও কাছে স্বাধীন গণমাধ্যম কি তাদের মুচলেকা বা দাসখত লিখে দিয়ে এসেছে? উত্তর যদি “না” হয়,তাহলে সারাবিশ্বে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির স্বপক্ষে তারা কেন জনমত গড়ে তুলছেন না? কেন তারা বিশ্বজুড়ে জনমত তৈরীতে অংশ নিচ্ছেন না?

আমরা জানি,গত শতকের প্রথম দশকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল,আর চারের দশকে ঘটেছিল মারাত্মক বিধ্বংসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সারাবিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবীরা আহ্বান জানিয়েছিলেন,শপথ নিয়েছিলেন যে, —” অতীত ভুলের পুনরাবৃত্তি আর এই বিশ্বে আমরা করবো না,করতে দেব না,হতে দেবো না।”(জেনেভা বিশ্বশান্তি সম্মেলন)। তাহলে আজ বুদ্ধিজীবীরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার মুখর না হয়ে,নীরবতায় মৌন কেন? তাঁরা তো টানটান ঋজু শিরদাঁড়ার মানুষ। তাঁরা তো চিরকালই মানুষের পক্ষে,শান্তির পক্ষে,মৈত্রীর পক্ষে। তাহলে তাঁরা নীরব কেন? নীরবতা ভেঙে বেরিয়ে আসুন,মানুষের পক্ষ নিন,শান্তির পক্ষ নিন,মৈত্রীর পক্ষ নিন।

আমেরিকা,রাশিয়া,ইউক্রেন, ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন, চীন, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, তিব্বত, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন, ইরাক, ইরান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলি পরস্পর যুদ্ধে রত, নয়তো গৃহযুদ্ধে ব্যস্ত।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে আরও ভয়ঙ্করতার সম্ভাবনা। এহেন গণমাধ্যম এবং জনগণের এই চুপচাপ থাত নির্লিপ্ততাই যে কোনও সময়ে সৃষ্টি করতে পারে আরও দু-চারটে ভয়াবহ নাগাসাকি,হিরোশিমা। দিনের আলোয় গোলাগুলি, মারণাস্ত্র নিক্ষেপ, এলাকার পর এলাকাকে আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া, রাতের অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে চলছে মিসাইল। জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে,খাক হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন,মানুষের ঘরবাড়ি, পরিবার পরিজন। আগুনের৷ ঝলসানিতে লাশ হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট শিশুরা।ধ্বংসাত্মক ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম,শহরের পর শহর। সে এক বিভৎসতা, যা ভাষায়,উচ্চারণে বর্ণনাতীত।

চারিদিকে অসহায় মানুষ মৃত্যুর সাথে বাস করছে প্রতিদিন প্রতিরাত, প্রতি মুহুর্ত হাতের মুঠোয় প্রাণটাকে নিয়ে। তারা জানেনা এক সেকেন্ড পরে কি লেখা আছে তাদের ভাগ্যে,তাদের পরিণতিতে।

আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক বিভৎস বিধ্বংসী বারুদের মৃত্যু উপত্যকায়। আমাদের বুকেতে,আমাদের প্রাণেতে চাপা এক অবরুদ্ধ কান্নাকে নিয়ে।

কবে ভাঙবে আমাদের এই নীরবতা? আবার কবে আমরা জাত-পাত, জাত-ধর্ম, দেশ-পরদেশ,নির্বিশেষে,সারাবিশ্বে শান্তির স্বপক্ষে সমবেত কন্ঠে উচ্চারণ করবো…

“ওরে হাল্লা রাজার সেনা,/তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল্
মিছে অস্ত্র-শস্ত্র ধরে /প্রাণটা কেন যায় বেঘোরে,/ রাজ্যে রাজ্যে পরস্পরে দ্বন্দে অমঙ্গল..
তোরা যুদ্ধ করে করবি কি’তা বল্???
(সত্যজিৎ রায়)

In the Universe,No more collision, and,No more War,
Come on my brothers sisters, take the oath for Peace forever.
( Beeb)

যুদ্ধ নয়,হিংসা নয়,এ বিশ্বকে গড়ে তুলি সব্বাই,
যুদ্ধ নয়,ধ্বংস নয়,শান্তি চাই,শান্তি চাই।।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.