পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে,ভাবনায় চিন্তায় সততই যে অনুভূতিটার বিচরণ তার নাম কৌতূহল…আর এই আশেপাশের সব কিছুকে জানার, চেনার,বুঝতে চাওয়ার অদম্য আগ্রহই মানুষ তার জীবনে চলার পথে সহজাত ভাবেই,প্রকৃতিগত ভাবেই পেয়েছে। তাই,কথায় বলে, “Man is curious by nature”।
মানব প্রকৃতির এ হেন জিজ্ঞাসার পিপাসা পিপাসিত হয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রান্তরে এসেছিলেন প্রকৃতির কাছে শিল্পী মানুষের দায়বদ্ধতা নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৮৯৪ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বরে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ার কাছে ঘোষপাড়া মুরাতিপুরের মামারবাড়িতে তার জন্ম।যদিও পৈতৃক বাড়ি ছিল বনগাঁয়।
লেখাপড়া বনগাঁর স্কুলে শেষ করে কলকাতায় চলে আসা,তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। এম.এ পড়তে পড়তে জাঙ্গিপাড়া হাইস্কুলে শিক্ষকতার পেশাতে যুক্ত হওয়া।
বিভূতিভূষণ সাহিত্য সাধনা শুরু করেন প্রথম বিবাহের পরেই(১৯১৭/ স্ত্রীর নাম গৌরী দেবী,১৯১৮ সালে স্ত্রী মারা যান)। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম রমা দেবী(বিয়ে করেন ১৯৪০ সালে)।
তার অনন্যসাধারণ লেখা বাংলা সাহিত্যের চিরকালীন সম্পদ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পথের পাঁচালী,অপরাজিত,আরণ্যক,আরোগ্য নিকেতন,চাঁদের পাহাড়, অশনি সংকেত, ইত্যাদি এবং অসংখ্য ছোট গল্প।তার মধ্যে অনেক কাহিনী সিনেমাতে চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।যেমন সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি,অপরাজিত,অশনি সংকেত, তরুণ মজুমদারের আগমন,আলো(কিন্নর দল গল্প), পলাতক,নিমন্ত্রণ, কমলেশ মুখোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিভূতিভূষণ ১৯৫০ সালের ১লা নভেম্বর ঘাটশিলায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরের বছর ১৯৫১ সালে মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরষ্কারে বিভূতিভূষণ ভূষিত হয়েছিলেন।বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালি উপন্যাসটি ইংরেজি, ফরাসী, স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
বাঙালী তথা মানব সভ্যতায় ভাই এবং দিদির এক চিরন্তন চরিত্র সৃষ্টি করে গেছেন বিভূতিভূষণ তাঁর পথের পাঁচালী উপন্যাসে “অপু-দুর্গা”.. র মধ্য দিয়ে,যা ভাই বোনের সম্পর্কের আবেগকে এক অনন্যসাধারণ অনন্যতা দান করেছে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইল আমাদের বিনম্র প্রণতি।