কলকাতা: সৌজন্যের রাজনীতিতে তৃণমূলের অন্দরে নজির গড়়েছেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী, অভিনেতা দেব। যে কারণে তাঁর দলের অনেকে প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছেন অভিনেতার। কিন্তু সেই দেবও অবশেষে ‘ফোঁস’ করলেন। জানিয়ে দিলেন, তিনি তৃণমূলে আছেন বলেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে ডাকাডাকি করেছিল। হিরণকে ডাকেনি। কারণ, তিনি বিজেপিতে আছেন।
ভোটের দু’দিন আগে ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অভিযোগ করলেন, গরুপাচার মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের কোম্পানি থেকে টাকা ঢুকেছে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দেব অধিকারী কাছে। অবশেষে সেই নিয়ে মুখ খুললেন দীপক। প্রশ্ন তুললেন, ইডি-সিবিআই-এর কাছে থাকা নথি কীভাবে এল বিরোধী দলনেতার হাতে?
বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছিলেন শুভেন্দু। তার ক্যাপশন ছিল ‘দেবের কীর্তি’। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা একটি অ্যাকাউন্ট থেকে জমা পড়েছে আরেকটি অ্যাকাউন্টে। শুভেন্দুর দাবি, গরু পাচারে অভিযুক্ত এনামুলের সংস্থা থেকে দেবের সংস্থার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল। অন্য একটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে, একটি ডায়েরির পাতায় হাতে লেখা ‘দেব মোবাইল: ৭২ হাজার টাকা’ এবং ‘দেব ঘড়ি: ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা’। পাশেই একটি পাতায় ছাপানো অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ‘দেব মোবাইল অ্যান্ড দেব ওয়াচ’। ডায়েরির পাতায় উল্লিখিত পরিমাণ অর্থের উল্লেখ রয়েছে ছাপা অক্ষরের পৃষ্ঠাটিতেও।
শুভেন্দু এই পোস্টেক কিছু পরেই পাল্টা দেব শুভেন্দুর পোস্টটি উল্লেখ (মেনশন) করে একটি পোস্টার পোস্ট করেছেন নিজের এক্স হ্যান্ডলে। তার উপরে লেখা, ‘পিন্টু মন্ডল নিবেদিত গীত-সঙ্গীত পরিবার’। তাতে বলিউডের অভিনেতা গোবিন্দ, বাংলাদেশের ফিরদৌস, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-সহ অনেকের সঙ্গে হিরণেরও ছবি রয়েছে। সেটি পোস্ট করে দেব লেখেন, ‘‘ও শুভেন্দুদা, তুমি নাকি কোথায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছ, হিরণের পাল্লায় পড়ে তোমাকে তো কাউন্সিলরে নামিয়ে দিচ্ছে। ভালবাসি বলে বললাম, আমিও জানি তুমি আমাকে ভালবাসো। আর রইল কথা গরু চুরির টাকা, তোমার কোলের ছেলে হিরো হিরণ, সে-ও পিন্টু মন্ডলের থেকে টাকা নিয়েছে, তা হলে উনিও…।’’
আরেকটি পোস্টে দেব লিখেছেন, ‘‘তা হলে উনিও কি গরু চোর ? শুভেচ্ছা দুজনকেই। আর একটা কথা, আমার ভদ্রতা কিন্তু আমার দুর্বলতা নয়।’’ দেব এই প্রশ্নও তুলেছেন, যে নথি ইডি, সিবিআইয়ের কাছে থাকার কথা, তা শুভেন্দুর হাতে গেল কী করে?
এর পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে দেব জানিয়েছেন, যেহেতু গরুপাচার মামলার তদন্ত চলছে সেই কারণে এতদিন তিনি মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। কিন্তু নথি যখন বাইরে এসেই গিয়েছে তাহলে চুপ থেকে লাভ নেই। তৃণমূল প্রার্থী বলেছেন, “তিন দিন ধরে এমন একটা হাওয়া গরম করা হল যে বিশাল কিছু আসবে। এই ধমকানো-চমকানো-ব্ল্যাকমেইলের রাজনীতি খুব দুঃখজনক। আর শুভেন্দুদার মতো একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিক… এমনকী আমি সকালে ওনাকে মেসেজও করেছি এটা কী দরকার ছিল?”
দেব আরও বলেছেন, “আজ শেষ দিন প্রচারের। আমায় তো একটা উত্তর দিতে হবে। আমি এতদিন চুপ ছিলাম। এখন যেহেতু নথি বেরিয়েই গিয়েছে আমি বলতেই পারি। কেন বেরলো? কোথা থেকে বেরলো। এইবার আমার মনে হয়েছে আর ভদ্রতা করে লাভ নেই।”