পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
সিঙ্গাপুরের সমুদ্রের কাছেই ম্যালকম রোডে একটি বাংলো। সেই শহরের মেয়রের এই বাড়িটি। সেখানে মেয়রের একান্ত অনুরোধেই থাকছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজির সম্মান সেখানে একজন বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানের সমান। সশস্ত্র প্রহরায় ঘেরা রয়েছে বাড়িটি।প্রতি তিনঘণ্টা অন্তর প্রহরীদের বদল হয়। বিশেষ অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ একদমই সম্ভব নয়।
৯ই জুলাই,১৯৪৩ সাল। একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তাই,আজ এখানে উপস্থিত উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকজন। যেমন,শ্রীমতী চিদাম্বরম (ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘের সিঙ্গাপুর শাখার সম্পাদিকা), ব্যারিস্টার মিঃ ইয়েলাপ্পা,মিঃ জন থিবি, প্রসিদ্ধ মালয়ালম লেখক,সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক মিঃ কেশব মেনন,সিঙ্গাপুরের শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান স্বামীজি, ডাক্তার বাল সুব্রমনিয়াম,প্রমুখ। হ্যাঁ,অবশ্যই রয়েছেন সিঙ্গাপুরের মেয়র,তার স্ত্রী এবং স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
আলোচনার শুরুতেই কেশব মেনন বললেন নেতাজিকে, ” পরশুদিনের জনসভায় আপনি মহিলা সেনা সংগঠনের বিষয়টি নিয়ে ভালই বলেছেন,কিন্তু সত্যি সত্যিই কি তা গড়ে তোলা সম্ভব? মেয়েদের নরম হাতে এমব্রয়ডারি আর আলপনাই মানায়,সুস্বাদু রান্না-বান্না,ঘর-দোর সাজানো এসবই মানায়, কিন্তু বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কি মানায়?” তিনি আরও বললেন, ” পৃথিবীতে একটাও দেশ কি দেখাতে পারবেন,যেখানে মেয়েদের ফৌজ আছে?”
বাকিরা সকলেই নেতাজির মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন,তিনি কি বলেন,তা শোনার জন্য,এমন কি কেশব মেননও।
নেতাজির দু’চোখে তখন বোধহয় ভেসে উঠছিল ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসের সেইসব বীরাঙ্গনাদের কাহিনীয়।দেবী চৌধুরানী,চাঁদ সুলতানা,সুলতানা রাজিয়া,দুর্গা বাঈ,লক্ষ্মীবাঈ,ভবশঙ্করী দেবী,রানী রাসমনী,প্রমুখদের কাহিনী। মনে ভাসছিল হয়তো এইতো সেদিনের দেখা ভগিনী নিবেদিতা, মাতঙ্গিনী হাজরা,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,বীনা দাশ,কল্পনা দত্ত,শান্তি দাশ,প্রমুখদের চোখের সামনে দেখা চেহারাগুলি। সেই কাহিনীগুলিই তিনি আবেগভরা কথা দিয়ে আলোচনায় বলে চললেন আর সবাই মুগ্ধতায় তা শুনছিলেন,এবং মনের মধ্যে তৈরী হচ্ছিল এক সুদৃঢ় প্রত্যয়,আত্মবিশ্বাস।
নেতাজির সুস্পষ্ট মতামত ছিল,” পৃথিবীর কোথাও হয়নি বলে,আমাদেরও হবে না? তাহলে তো প্রগতির কোনও সম্ভাবনাই কোনদিন হবে না।” ব্যারিস্টার মিঃ ইয়েলাপ্পা বলে উঠলেন,” আমরা না হয় জনা চার-পাঁচজন মহিলাকে দিয়েই আরম্ভ করতে পারি”। সবাই সায় দিলেন সেই কথায়। শুধু নেতাজি উচ্ছ্বসিত,উদ্দীপিত কন্ঠে বলে উঠলেন ” চার-পাঁচজন কেন মিঃ ইয়েলাপ্পা,একজনই বারুদের স্তুপে অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ লাগানোর জন্য যথেষ্ট”।
এমনই এক মহিলারও সন্ধান মিলল সেই আলোচনা সভাতে।সিঙ্গাপুরেরই একমাত্র মহিলা গায়নোকোলজিস্ট ডাক্তার লক্ষ্মী স্বামীনাথন।
মহিলাদের জটিল প্রসবের ক্ষেত্রে তিনি ইতিমধ্যেই অভূতপূর্ব দক্ষতা অর্জনের প্রমান দিয়েছেন।দীন-দুঃখী মানুষের সেবায় নিবেদিত এই বিদুষী, মিঃ কেশব মেনন এবং মিঃ ইয়েলাপ্পার সাহচর্যে ইতিমধ্যেই ভারতের স্বাধীনতা সংঘের নানা কাজে সোৎসাহে যোগ দিয়েছেন। তাই সেই আলোচনার পরের দিন ভগ্নীসমা লক্ষ্মীকে নেতাজির কাছে নিয়ে এলেন মিঃ কেশব মেনন আর মিঃ ইয়েলাপ্পা একসঙ্গে। নেতাজি তাকালেন মেয়েটির দিকে অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে” একটা কাজ করতে পারবেন লক্ষ্মী?” বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করেই লক্ষ্মী উত্তর দিলেন ” আপনি শুধু একবার হুকুম করে দেখুন না।” নেতাজি বললেন, “সুলতানা রিজিয়ার ইতিহাস জানেন? মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে লক্ষ্মী বললেন,” নেতাজি, আপনি আমাকে ‘তুমি’ করে বলুন.”। নেতাজি বলে চলেন.. “সুলতানা রিজিয়া, বোরখার আড়ালে নিজেকে ঢেকে রেখে চাঁদ-সূর্যকেও মুখ দেখাতেন না যারা, তাদের সমাজে জন্মেও পরে পুরুষের একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হয়েছিলেন দিল্লির মসনদের প্রথম সম্রাজ্ঞী।আজ আমাদের দেশের উনিশ কোটি মহিলা, এই বিপুল নারী শক্তি একবার জেগে উঠলেই ব্রিটিশরা আমাদের কাছে নতজানু হবেই।আমি চাই তোমার মধ্যে দিয়েই রাজিয়া সুলতানা, ঝাঁসীর রানী লক্ষ্মীবাঈ রা আবার আমাদের ভারতবর্ষে ফিরে আসুক। রণক্ষেত্রের মাটিতে ঝাঁসীর রাণীর হাত থেকে তাঁর শহিদ হওয়ার সময় যে তলোয়ার পড়ে গিয়েছিল মাটিতে, সেই তলোয়ার আবার ঝলসে উঠুক তোমাদের হাতে। পূর্ব এশিয়ার মেয়েরা তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে গর্জে উঠুক দেশের স্বাধীনতার জন্যে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে। পারবে তুমি সেই কাজ করতে? “
বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে লক্ষ্মী বিনম্রতায় জানতে চাইলেন”মেয়েদের ওপর এমন গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা এবং বিশ্বাস আপনার কেমন করে তৈরি হোল নেতাজি?” নেতাজির অন্তর থেকে যেন উচ্চারিত হোল। তিনি বললেন, “স্বামী বিবেকানন্দের বাণী এবং তাঁর কাজ,আর আমার বাসন্তী মা-কে দেখে।দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস তাঁর স্ত্রীকে এমনভাবেই উদ্বুদ্ধ করেছিলেন যে বাসন্তী-মা মানুষের জন্য পথে নেমেছিলেন। একবার আমাদের দেশের মেয়েদের উঠে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করো লক্ষ্মী। দেখবে বিপ্লবের আগুন কেমন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে চারিদিকে। “
বিনম্রতায় লক্ষ্মী সেদিন নেতাজির আশীর্বাদ নিয়েছিলেন।
তারপর আত্মবিশ্বাসী লক্ষ্মী জার্মান থেকে আগত নেতাজি র সহকর্মী মিঃ এন.জি.স্বামী এবং আবিদ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে মহিলাদের একত্রিত করা ও অনুপ্রাণিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। নেতাজি বলেছিলেন যে ব্রিটিশের সাথে লড়তে গেলে কামানের সামনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে, তার জন্য দরকার কঠিন মিলিটারির ট্রেনিং,… তাই করেছিলেন লক্ষ্মী।
যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য মহিলাদের পোশাক কেমন হবে? শাড়ী তে যদিও মেয়েদের ভালো মানায়, কিন্তু কুচকাওয়াজ-এ,ট্রেনিং এর সময় অথবা লড়াইয়ের ময়দানে শাড়ী কি উপযুক্ত হবে? এই কথা শুনে নেতাজি বলেছিলেন… ” আমি শুধু একটা উদাহরণ দিতে পারি, ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে শহিদ হওয়ার সময়ে ঝাঁসীর রানী লক্ষ্মী বাঈয়ের অঙ্গে ছিল রক্তে ভেজা পুরুষের পোশাক। “
২৫ শে জুলাই,১৯৪৩ সাল। ওয়াটারলু স্ট্রিটে মহিলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ হবে। সুভাষ চন্দ্র গেলেন সেখানে।তাঁকে সুস্বাগতম জানানো হলো বিউগলের ধ্বনিতে। সামনে কুড়িজন মহিলা সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সকলের পরনে বুশ-কোট এবং শার্ট। তাদের নেতৃত্বে ডাক্তার লক্ষ্মী স্বামীনাথন পরনে সামরিক খাকি কোট,হান্টিং ব্রিচেস,হাঁটু ঢাকা হান্টিং বুট,মাথায় গোল সামরিক টুপি। ততদিনে মহিলা বাহিনীর নামকরণ করে দিয়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্বয়ং,”ঝাঁসীর রানী রেজিমেন্ট “। ঝাঁসীর রানি রেজিমেন্ট-এর সেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে নেতাজি ভাষণ দিয়ে বললেন,” ক’টা রাইফেল আপনারা ব্যবহার করবেন, ক’টা গুলি আপনারা ছুঁড়বেন,সেটা বড় কথা নয়।বড় কথা হচ্ছে আপনাদের এই অদম্য ঐতিহাসিক সাহসিকতা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতো অন্যায়ের মাঝে,এতো প্রতিকুলতার মাঝে যে দৃষ্টান্ত দিকে দিকে জাগিয়ে তুলবে দুর্জয় সাহস,সৃষ্টি হবে ইতিহাসের এক নতুন যুগ,অভিনব অধ্যায়।”
এর কয়েক দিন পরে,২ রা আগস্ট,১৯৪৩ সাল, নেতাজি পৌঁছলেন কুয়ালালামপুর। উদ্দেশ্য “Total Mobilization for Total War…”। পাডাং ময়দানে সেদিনের আয়োজিত সভায় নেতাজি সামনে বসে থাকা মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন “আমার মা-বোনেরা,আজ আপনারা দেখিয়ে দিন যে মেয়েরা শুধু পুরুষদের ওপর নির্ভর করে থাকা দূর্বল লতা নন…,তাঁরা আকাশ বাতাস বিদীর্ন করে ঝলসে ওঠা বিদ্যুৎলতা। আমাদের দেশে চাঁদবিবি,অহল্যাবাঈ,সুলতানা রিজিয়া,লক্ষ্মী বাঈ, প্রমুখরা প্রমান করেছেন কোনো বিচারেই তাঁরা পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশে কম নন।এই শতাব্দীতেও আমাদের বিপ্লবী নারীরা দরকার হলে বোমা -পিস্তলের ব্যবহারেও কারও চেয়ে কম যান না তাঁরা।” এরপর নেতাজি সকলের কাছ থেকে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য সব রকমের সাহায্য-দান চাইলেন উপস্থিত সকলে যার যা ছিল, যার যা সামর্থ তাই দান করতে লাগলে।
ঠিক এই সময়ে একটু তফাতে, সভাস্থলের ভিড়ের পিছনে স্কুল থেকে ফিরতি পথে সাইকেলে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ১৩/১৪ বছরের মেয়ে ভিড় ঠেলে নেতাজির দিকে পায়ে পায়ে এগোতে থাকে।তারও ইচ্ছে সেও কিছু দান করবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর তহবিলে। মেয়েটির স্থির নজর নেতাজির দিকে আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ঝাঁসীর রানী বাহিনীর ক্যাপ্টেন ডাক্তার লক্ষ্মী স্বামীনাথনের দিকে।
একটা সময়ে মেয়েটির পালা আসে। হঠাৎ খেয়াল হয় তার যে, দেওয়ার মতো তো কিছুই নেই তার কাছে। বেশি কিছু না ভেবে তৎক্ষণাৎ সে তার নিজের কানের দুল-জোড়া কান থেকে খুলে নেতাজির হাতে তুলে দেয়।ঘটনায় নেতাজি হতচকিত।কয়েক মূহুর্ত কেটে যায়, নেতাজি ফটোগ্রাফারকে ডেকে নেন,মেয়েটির ছবি তুলতে বলেন। তারপর স্কুলছাত্রী সেই মেয়েটকে আশীর্বাদ করে তার নাম জানতে চান” বেটি,তোমার নাম কী?” মেয়েটি অবাক চোখে নেতাজিকে দেখতে দেখতে নাম বলে..”জানকী দাভার”
” তোমার বাবা কী করেন?”নেতাজির জিজ্ঞাসা মেয়েটিকে।
“ব্যবসা।একটি বড় ডেয়ারির মালিক তিনি”। মেয়েটির চটপট উত্তর।তখনও সে বিমোহিত হয়ে নেতাজিকে দেখে চলেছে।তার সারা শরীরে,বুকের মধ্যে এক অন্য রকমের রোমাঞ্চকর অবস্থা।সে যে বিশ্বাসই করতে পারছে না, এতো বড় বিরাট মাপের মানুষ তার সামনে, আর তার বাবার মতই স্নেহমমতায় তার মাথায় হাত দিয়ে তাকে আশীর্বাদ করলেন,তাকে কতো নিজের আপনজনের মতো সস্নেহে জিজ্ঞাসা করছেন একের পর এক কথা।
সম্বিত ফিরলো নেতাজির কথায়” বেটি, এই দুল-দুটি তুমি নিয়ে যাও।আমি তোমাদের বাড়ি যাবো,তোমার বাবার সাথে পরিচয় করবো।তারপর,তোমার যা ইচ্ছে হবে তাই দান কোরো,আমি তা গ্রহণ করবো।”
“আচ্ছা বেটি,ভারতবর্ষকে পরাধীনতার গোলামীর ফাঁস থেকে বাঁচাতে আর কী কী করতে পারো তুমি?”
সেদিন ছোট্ট জানকী কোন উত্তর দিতে পারেনি।এক ছুট্টে ভিড় ছেড়ে চলে গিয়েছিল,সাইকেলটা খুঁজে নিয়ে নিজের বাড়ির পথ ধরেছিল।নেতাজির প্রশ্ন বাজতে থাকে তার কানে “বেটি,ভারতবর্ষকে পরাধীতার গোলামীর ফাঁস থেকে বাঁচাতে আর কী কী করতে পারো তুমি?”
পরের দিন সকালে স্থানীয় “সোনান্ টাইমস্” সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় মেয়েটির ছবি দেখেন বাবা। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতেই পারছিলেন না বাবা।নেতাজিকে নিজের কানের দুলজোড়া খুলে দান করছে তাঁর ছোট্ট জানকী। জানকীর বাবা স্বাধীনতা সংঘ তথা আজাদ হিন্দ-এর কথা জানতেন। নেতাজি কে দেবতার মতো শ্রদ্ধা করতেন। সেই নেতাজির আশীর্বাদ-এর হাত তাঁর মেয়ে জানকীর মাথায়! শিহরিত হয়ে উঠছেন বাবা আনন্দে,বিহ্বলতায়।
সেই সুত্রে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথনকে চা-পানের জন্য আমন্ত্রন জানালেন বাড়িতে জানকীর বাবা। জানকী নাছোড়বান্দা…সে তাদের মাতৃভূমি,স্বদেশভুমি ভারতবর্ষের জন্য কিছু করতে চায়,সে নেতাজির আদর্শের পথে চলতে চায়।তাই ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী বাড়িতে আসতেই মহিলা রেজিমেন্টে ভর্তি হওয়ার দরখাস্তটি বাবার হাতে তুলে দেয় জানকী। তাতে স্বাক্ষর করার সময়ে জানকীর বাবা বিহ্বল। জানকীর মা দিশাহারা হয়ে বাবা-মেয়ের কাণ্ড দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ়, তাই তিনি জানকীর বাবাকে বলেন.. মেয়েকে আটকাও, “জানকীর বাবা আনন্দে বলে ওঠেন,” কী করে ওকে আটকাবো? এতো বড়ো একটা কাজ হতে চলেছে আর এখন আমরা শুধু স্বার্থপরের মতো নিজেদের কথা ভাববো? তা হয় না,আমি তো ঠিক করেছি যে এখন থেকে আমিও স্বাধীনতা সংঘের সাথে কাজ করবো।”
ওদিকে জানকীকে ব্যাগ গোছাতে দেখে তার দিদি পাপাথি-ও জেদ ধরে বলে ওঠে,” বাবা আমিও বোনের সঙ্গে যাবো দেশের কাজে। নেতাজির আদর্শের পথ ধরে চলবো।”
জানকী আর পাপাথি-র বাবা মেয়েদের নিয়ে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথনের সাথে গেলেন নেতাজির কাছে।নেতাজির হাত দুটি ধরে কান্নাভেজা গলায় বললেন” নেতাজি, আমার দুই মেয়েকেই তুলে দিলাম আমাদের পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য,দেশের কাজের জন্য আপনার হাতে ।”
জানকী আর পাপাথি-র বাবার কথাগুলি সেদিন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু-র আর লক্ষ্মী স্বামীনাথনের হৃদয় বিদীর্ন করেছিল।
তারপর তো সে এক অন্য অধ্যায় যা এই দেশের ইতিহাসে লেখা আছে,লেখা থাকবে চিরকালের হয়ে। দেশের জন্য আত্মবলীদানের কাহিনীর পাতায় পাতায় এই দেশ সেই মুক্তির মন্দির সোপানতলে রেখে যায় বিনম্রতায়, অভিবাদনে,শ্রদ্ধায় শত-কোটি প্রণাম।