ওয়েবডেস্ক : মহাতারকা, অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি-চিত্রকর। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। জৌলুস আর মেধার এমন সংমিশ্রণ, তারকা ও মানুষের এমন সহাবস্থান, জনপ্রিয় ও প্রিয় জনের এমন মেলবন্ধন বাঙালি এর আগে পায়নি।
তাঁর অভিনয়ে ফুটে ওঠা এক একটি চরিত্রকে বাঙালি তার ঘরের লোক বলে জেনেছে, পাশের মানুষ বলে চিনেছে। অসংখ্য মানুষকে জীবনের নানা বিপন্নতায়, অসহায়তায় স্থৈর্য দিয়েছে সৌমিত্র-অভিনীত এই সব চরিত্র।
কখনও উদয়ন পণ্ডিত কাউকে দেখিয়েছেন নৈতিকতার পথ, কখনও খিদ্দা কাউকে শিখিয়েছেন অপরাজয়ের মন্ত্র, আবার কখনও ফেলুদা কাউকে দিয়েছেন সাহসের টোটকা।
যাঁরা সাহিত্যনির্ভর, চলচ্চিত্রপ্রেমী, তাঁদের কাছে এই সব চরিত্র বড় বেশি জীবন্ত। এই সমস্ত উড়ে চলা ঘুড়ির সুতো শেষ হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। নানা চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছেটুকুকে জিইয়ে রেখেছিলেন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
সত্যজিত্ রায় তাঁকে বারবার নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করিয়েছেন। তপন সিনহাও তাই। এমনকি তরুণ মজুমদারের কাছেও ভিন্ন চরিত্রই পেয়েছেন তিনি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে কোনও সেকেন্ড ইনিংসের প্রয়োজন হয়নি। বয়স যত বেড়েছে, তত বেশি করে চওড়া হয়েছে কাঁধ।
আরও পড়ুন : ছুৎমার্গ ভেঙে মহিলাদের হয়ে ব্যাটন ধরেছিলেন ‘মাদার’ দুর্গা
অপরাজিত থেকে ফেলুদা হয়ে বেলাশেষে থেকে বরুণবাবুর বন্ধু …..পেরিয়ে গেছে ময়ূরাক্ষী, বসু পরিবার। নিছক সিনেমার অভিনেতা নন, মঞ্চে তাঁর এক বিশাল অবদান। মঞ্চে একের পর এক নাট্য প্রযোজনায় পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। মঞ্চ থেকই অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাট্য জীবন বাংলা মঞ্চ অভিনয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ‘দ্য মঙ্কিস প’ অবলম্বনে ‘মুখোশ’ থেকে, ‘বিদেহী’, ‘নামজীবন’, ‘নীলকণ্ঠ’। ‘স্বপ্নসন্ধানী’ দলে কৌশিক সেনের সঙ্গে ‘টিকটিকি’ বাংলা নাটকে এক ফেনোমেনন।
তাঁর কর্মজীবন অবশ্য শুরু আকাশবাণীতে ঘোষক হিসেবে। পরে বাচিক শিল্পী হিসেবেও তিনি ছাপ রাখেন। তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রকবিতা বা জীবনানন্দ আচ্ছন্ন করে কবিতারসিক বাঙালিকে। কবিতা আবৃত্তি শুধু নয়, নিজে কবিতা রচনাও করেছেন তিনি। করেছেন পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।
কিংবদন্তী শিল্পীকে জন্মদিনে শ্রদ্ধা।