পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
সাম্প্রতিককালে পেশাগত জীবনের একটি জ্বলন্ত সমস্যায় কমবেশি জর্জরিত মানব সমাজের আধুনিক পৃথিবী।
সেটি হোল পেশার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপের টানাপোড়েন।যার শিকার হচ্ছে যুব সমাজ। যেমন,সম্প্রতি পুণের একটি সংস্থায় চাকরীরতা ২৬ বছরের এক তরুনী চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এনা সেবাস্টিয়ান পেরিল সংস্থায় যোগ দেওয়ার চার মাসের মধ্যে মারা যান। অভিযোগ ওঠে প্রচন্ড কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, যার পরিণাম মৃত্যু। এনা-র মা জানাচ্ছেন যে এনা তার স্কুল কলেজ জীবনের সমস্ত পরীক্ষাতেই সবার আগে থাকতেন। তার স্বভাবের একটি বিশেষত্ব ছিল যে সে কাউকে না বলতে পারতো না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে যে,”না” বলতে শেখাটাও কি জরুরী? কিন্তু সমস্যা হোল,যে “না” বলে দেওয়ায় যদি কাজ চলে যায়? কাজ হারালে তখন কি হবে?
২০২১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শম সংগঠন আইনে অতিরিক্ত কাজের কুফল সম্বন্ধে একটি সমীক্ষা প্রকাশ হয়েছিল। সেই সমীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে যে,সপ্তাহে ৫৫/৫৬ ঘন্টা বা তারও বেশী সময় ধরে ক্সজ করলে মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দেয়।
২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল,যে মুম্বাই সারা বিশ্বে সবচেয়ে পরিশ্রমের শহর। দিল্লি ছিল চতুর্থ স্থানে।
২০১৮ সালের পর্যবেক্ষণ বলছে,ছুটি উপভোগ করার ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ হোল আমাদের দেশ ভারতবর্ষ।
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশান (আই.এল.ও)-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষে কম বয়সী যুবক,যুবতীরা সপ্তাহে ৫৮/৬০ ঘন্টারও বেশি কাজ করে। বয়স ৩০ বছর হলে,সময়টা ৫৭/৫৮ ঘন্টা হয়।যদিও শ্রম আইনে সপ্তাহে ৬x৮= ৪৮ ঘন্টার কাজের কথা বলা আছে।তবু ভারতে তার চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করানো হয়।
WHO(world Health organisation) এবং international Labour Organisation (ILO)- এর সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে,২০১৬/১৭ সালে অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করায়,১৭ লক্ষ ৮৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোকের কারণে। সেই সুত্রই বলছে,যে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার বেশি সময় ধরে কাজ করলে,বা দিনে ১২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে কাজ করলে মানসিক স্বাস্থের সমস্যা দেখা দেয়। এই কাজের প্রেশার দেখা যায় আজকের আধুনিক যুগের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলিতে।
আজকের পৃথিবীতে এই সমস্যাটি একটি আক্ষরিক অর্থেই জ্বলন্ত সমস্যা। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের জুন মাসে I.L.O এবং W.H.O.যৌথভাবে রকটি আবেদন রেখেছেন করপোরেট জগতের কাছে এবং চাকুরীরত মানুষদের কাছে,যে, অতিরিক্ত কাজের চাপ যেমন কর্মচারীদের দেওয়া যাবে না,ঠিক তেমনই কর্মচারীরা তাদের অসুবিধার কথা স্পষ্ট করে বলুন,কোনও রকমের দ্বিধাবোধ ছাড়াই।প্রয়োজনে “না” বলুন, “না” বলতে শিখুন।
আর সর্বক্ষেত্রে এই বিষয়ে আরও সচেতন হোন উভয় ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত মানুষজন।
এটাই এখন আমাদের সভ্যতার দাবী।