প্রথম পাতা প্রবন্ধ বাংলা একাঙ্ক এবং পূর্ণাঙ্গ নাটকের জনক মন্মথ রায়

বাংলা একাঙ্ক এবং পূর্ণাঙ্গ নাটকের জনক মন্মথ রায়

792 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

১২৫ বছরে পদার্পন বাংলা নাটকের জনক মন্মথ রায়-এর জন্মবার্ষিকী। যদিও তিনি আজ বাঙালির কাছে, বাঙলার কাছে বিস্মৃতপ্রায়।

মন্মথ রায়ের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৬ ই জুন,তখনকার অবিভক্ত বাংলার টাঙ্গাইল জেলার (এখন বাংলাদেশের) গালাগ্রামে।তারপর তাঁর কলকাতায় চলে আসা। এবং শিক্ষান্তে, নিজস্ব পেশার পাশাপাশি বাংলা নাটকের জগতে নিজেকে নিয়োজিত করা।

তিনি শুধু নাট্যকারই নন,তিনি ছিলেন নাট্য অধিকারের এক আপোষহীন অকুন্ঠ প্রবক্তা,প্রগতিশীল এবং সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর মানুষ। সমাজের অর্থনৈতিক অসমতা,শোষণ, সামাজিক নিষ্পেষণ আর শাসকের এবং রাজনৈতিক অত্যাচারে জর্জরিত সাধারণ মানুষের কাহিনী তাঁর নাটকের বিষয়বস্তু ছিল।

মানুষের জীবনের “সূক্ষতম অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতিটি রূপ,পর্দা ইনি অতি নিপুণ হস্তে উন্মোচিত করিয়াছেন।অন্তর্দ্বন্দ্বের এই অবিরাম সংঘাতে ইঁহার সৃষ্ট চরিত্রগুলির মর্মস্থল ছিঁড়িয়া যাইতেছে বলিয়া মনে হয়।” ( অজিত কুমার ঘোষ/ বাংলা নাটকের ইতিহাস)

মন্মথ রায়ের নাটক অতীতে একসময়ে কলকাতার বিভিন্ন রঙ্গমঞ্চে অসামান্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। গভীরভাবে বাস্তব জীবনবোধ, এবং শিল্পরূপের বিস্ময়কর সংমিশ্রণ তাঁর নাটক সৃষ্টিবৈচিত্র্যকে এক অনন্যতা দান করেছিল।

পরাধীন দেশে ১৯৩০ সালে বৃটিশ সরকার মন্মথ রায়ের লেখা “কারাগার” নাটকটি নিষিদ্ধ করেছিল।

১৯২৩ সালে মন্মথ রায়ের প্রথম একাঙ্ক নাটক “মুক্তির ডাক” প্রকাশ হয়েছিল।সেই নাটক সম্মন্ধে সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বলেন — “যথার্থই একখানি ড্রামা”। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন – “এক বুক কাদা ভেঙে পথ চলে এক পদ্মদিঘি দেখলে দ’চোখে আনন্দ যেমন ধরে না,তেমনি আনন্দ দু’চোখ পুরে পান করেছি আপনার লেখায়।”(নবনাটিকা দর্শনাকাঙ্খী)।

সেই সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবীদের আন্দোলনকালে জনমানসে দেশাত্মবোধের জাগরণ-এর জন্য তিনি লিখেছেন বহু নাটক। যা বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা ছিল। বাংলা নাট্য ইতিহাসে তিনিই ছিলেন জনক। ১৯৮৮ সালের ২৬শে আগষ্ট৷ কলকাতায় মন্মথ রায়ের জীবনাবসান ঘটে।

তাঁর নাট্যকীর্তি অসংখ্য। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো —
মুক্তির ডাক, মহুয়া(১৯২৩), সেমিরেজিম(১৯২৫),কাজলরেখা(১৯২৬),চাঁদ সওদাগর (১৯২৭),দেবাসুর(১৯২৮),
কারাগার(১৯৩০),
সাবিত্রী (১৯৩১),একাঙ্কিকা (১৯৩১),অশোক(১৯৩৩), খনা(১৯৩৫),সতী, বিদ্যুপর্ণা(১৯৩৭),রূপকথা(১৯৩৭), মীরকাশেম(১৯৩৮),
ভাঙাগড়া (১৯৫০),মহাভারতী(১৯৫০),
পথে ফিরে, উর্ব্বসী,নিরুদ্দেশ,ধর্মঘট,
জীবনটাই নাটক,(১৯৫৩), মীরাবাঈ (১৯৫৪), শ্রীশ্রী মা, রঘুডাকাত,জটা গঙ্গাধর বাঁধ (১৯৫৫), জীবন মরন,গুপ্তধন, লাঙ্গল(১৯৫৬), সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৯৫৮), অমৃতঅতীত (১৯৬০), লালন ফকির(১৯৬৯), আমি মুজিব(১৯৭১),প্রভৃতি।

সবশেষে মন্মথ রায়ের বহু অভিনীত নাটক “মহাপ্রেম”- এর উল্লেখ করতেই হয়।চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ-এর পটভুমিকায় লেখা এই নাটক আপামর জনগনের মনে দেশাত্মবোধের জন্ম দিয়েছিল সেই সময়ে।

আমরা বাঙালীরা চিরকাল আপন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের পরম্পরা ভুলে যেতে ভালোবাসি,তাই আজ ১২৫ জন্মবার্ষিকীর সময়ের অনেক আগে থেকেই আমরা বিস্মৃতপ্রায় হয়ে গেছি বাংলা নাটকের জনক মন্মথ রায়কে। এই অবস্থা আমাদের গৌরবের না অগৌরবের? এই মূল্যায়ন বোধহয় আমাদের করা দরকার।

আজ তাই, সেই প্রায় ভুলে যাওয়া নাট্যকার এবং এক প্রতিবাদী চরিত্রের মানুষ মন্মথ রায়-কে সসম্মানে মনে রাখার দায়বদ্ধতা থেকেই তাঁর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই,যে আমরা আমাদের অতীতকে, ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করবোই।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.