পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
১৯৯৭ সালে বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর চার বছর পরে স্বামীজির মনে মঠে দুর্গাপূজার ইচ্ছে হোল।ঠিক সেই সময়েই স্বামীজির গুরুভাই স্বামী ব্রহ্মানন্দ এক অলৌকিক স্বপ্ন দেখেন।তিনি দেখেছিলেন যে সাক্ষাৎ দেবী মা দুর্গা দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে গঙ্গার ওপর দিয়ে বেলুড় মঠের দিকে এগিয়ে আসছেন। স্বামী বিবেকানন্দ সেই স্বপ্নের কথা শুনে দুর্গাপূজার ব্যাপারে খুব উৎসাহী হয়ে উঠলেন।সেই সময়টা ছিল ১৯০১ সাল( ১৩০৮ বঙ্গাব্দ)।
যাইহোক, পুজার আয়োজন শুরু হোল।উপকরণ সংগ্রহের ভার পড়লো স্বামী ব্রহ্মানন্দের ওপর।তিনি জোগাড় করতে লাগলেন জিনিসপত্র। এরপর যথাদিনে কুমারটুলিতে প্রতিমার জন্য যাওয়া হোল।কিন্তু কপালে হাত।একটাও প্রতিমা নেই। শেষে অলৌকিকভাবে একটি জায়গাতে একটি মাত্র প্রতিমা পাওয়া গেল।কারা যেন প্রতিমা নেবে বলে বায়না দিয়ে গিয়েছিলেন,কিন্তু প্রতিমা নিতে তারা আসেননি।অতএব সেই প্রতিমা এলো বেলুড় মঠের প্রথম দুর্গাপূজার জন্য।
পুজোর আয়োজনের আগে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর “জ্যান্ত দুর্গা” –শ্রীশ্রীমা সারদা মায়ের অনুমতি নিয়েছিলেন।পুজোয় আমন্ত্রন করা হোল শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব-এর সকল শিষ্যদের,বালি,বেলুড়,উত্তরপাড়ার সকলকে পুজোর প্রসাদের জন্যে।
সেই বছরে ১৮ ই অক্টোবর (বাংলার ১লা কার্ত্তিক),শনিবার, বেলুড় মঠের বিল্বতলায় দেবী মায়ের মহাষষ্ঠীর বোধন হয়েছিল। স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ গান করেছিলেন—” গিরি গনেশ আমার শুভকারী/ পুজে গণপতি পেলাম হেমবতী/ চাঁদের মালা যেন চাঁদ সারি সারি।// বিল্ববৃক্ষ মুলে পাতিয়া বোধন,/গণেশের কল্যানে গৌরীর আগমন/ ঘরে আনিব চন্ডী,কর্ণে শুনিব চন্ডী/আসবে কতো দন্ডী জটাজুটধারী।//
শ্রীমা সারদাকে দুর্গাপূজার আগেই স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড়ের নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তাদের পরিবারের মধ্যেই আনিয়ে রেখেছিলেন।
শ্রীমা সারদা-র অনুমতি নিয়েই এই পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। পুজোর পুজারী ছিলেন ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল,এবং তন্ত্রধারক হয়েছিলেন শশী মহারাজের পিতা ঈশ্বরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
পুজোর কটাদিন বেলুড় মঠে সানাই বাদনের বন্দোবস্ত
করা হয়েছিল।প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটেছিল।
রবিবার মহাসপ্তমীর দিন স্বামী বিবেকানন্দের জ্বর হয়েছিল। পরের দিন সোমবার সকালে সন্ধিপুজো। স্বামী বিবেকানন্দ পুজামন্ডপে এসেছিলেন,পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছিলেন।ভাবগম্ভীর মুখে বসেছিলেন। কুমারী পুজোয় মায়ের পায়ে পুষ্পার্ঘ্য প্রদান করেছিলেন। নিজে কুমারীদেবীকে পুজো করেন।
মহানবমীর আরতির পরে স্বামী বিবেকানন্দ নিজে ভজন গাইলেন। শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নবমী রাতে যে যে গান গাইতেন, স্বামী বিবেকানন্দ সেই গানগুলিই গেয়েছিলেন সেদিন।
পরের দিন বিজয়া দশমী(৫ই কার্ত্তিক) মঙ্গলবার, বেলুড় মঠের সংলগ্ন গঙ্গায় নৌকায় চাপিয়ে দেবী মায়ের মৃন্ময়ী প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। আর জগজ্জননী চিন্ময়ী প্রতিমা শ্রীমা সারদা ছিলেন সেই দুর্গাপূজার মধ্যমণি।
সম্পূর্ণ বৈদিক বেদান্ত মতে এই পুজা শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আজ সেই পুজো ১২৫ বছরের দোর গড়ায়।
আজও বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা সারা বিশ্বের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণীয় অতুলনীয় অনুষ্ঠান হয়ে আছে।
সকল কে আসন্ন শারদীয়া দেবীপক্ষের শুভ মঙ্গলকামনা, অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানাই। সকলে ভালো থাকুন।